আদর্শ বিবাহ ও দাম্পত্য আবদুল হামীদ ফাইযী
বিশুদ্ধ শরয়ী জ্ঞান-স্বল্পতা, বিশুদ্ধ শরীয়তের উপর আমল করার প্রতি অবহেলা ও অবজ্ঞা, স্বার্থানেবষিতা এবং দেশীয় পরিবেশের বিশেষ কুপ্রভাবের ফলে মুসলিম সমাজে বিভিন্ন কুসংস্কার, কুপ্রথা, কুআচার ও অনাচারের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। পরকালের প্রতি ক্ষীণ ঈমান তথা অসৎ পরিবেশ ও পারিপাশির্বকতার কারণে অধিকাংশ মানুষের ইচ্ছা নেই নিজেকে কুসংস্কার-মুক্ত করার, মন নেই আত্মশুদ্ধির, চেষ্টা নেই দ্বীন শিক্ষার, ভ্রূক্ষেপ নেই ধর্মীয় বাণীর প্রতি, নেই সমাজকে কুপ্রথা ও অনাচারমুক্ত করার কোন সৎসাহস!
কাজ যেহেতু একা কারো নয়। প্রয়োজন যৌথ প্রচেষ্টার। ব্যাপারটাও কেবল মুখ ও কলমের নয়; বরং আমল ও কাজের। তাই আমূল সংস্কার ও পরিবর্তন সাধনের জন্য চাই আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার সম্মিলিত ঐকান্তিক প্রচেষ্টা; যার শীর্ষে থাকবে আল্লাহ-ভীতি, পরকালের প্রতি পূর্ণ ঈমান, হিসাব-নিকাস ও জবাবদিহির ভয়, দোযখের শঙ্কা এবং বেহেশ্তের লোভ।
বিবাহ ও দাম্পত্য মুসলিমদের এক শুভ ও সুখদ সন্ধিক্ষণ, আবার অশুভ ও যন্ত্রণাপ্রদ সময়কালও। এই শুভাশুভ নির্বাচন করায় তারও হাত আছে। যেমন বিবাহ করা অর্ধ ঈমান। দাম্পত্য-জীবন তার অর্ধেক ধর্মীয় জীবন। তাছাড়া দাম্পত্যের সফরও বড় লম্বা। যার সঙ্গীও চিরসঙ্গী। তাই তো অর্ধ ঈমান যাতে অবলীলায় এসে অবহেলায় বরবাদ না হয়ে যায় এবং এই লম্বা সফর যেন কষ্টকর তথা তার সাথী যেন কুজন ও কুসাথী না হয়, তার জন্য সফর শুরু করার পূর্বে, জীবন-সমুদ্রে তার দাম্পত্যের তরণী অবতারণ করার আগে আগে তাকে একটু ভেবে নিতে হয়, কিছু জেনে ও পড়ে নিতে হয়। নচেৎ আনাড়ী মাল্লা মাঝ সমুদ্রে ফাঁপরে পড়তে বাধ্য।
বিবাহের পূর্বে অনেক যুবক-যুবতী বহু রতিশাস্ত্র অধ্যয়ন করে থাকেন; কিন্তু কোন ধর্মীয় রীতিশাস্ত্র অধ্যয়ন করার প্রয়োজন মনে করেন না। অথচ প্রেম ও প্রেমের ধরন তথা যৌনসুখ তো যে কোন প্রকারে লাভ হতেই পারে। পরন্তু লাভ যা হয় না, তা হল প্রেম ও যৌবনে নীতি-নৈতিকতা, সংযমশীলতা, দাম্পত্য ও সাংসারিক পরম শান্তি এবং সৃষ্টিকর্তার চরম সন্তুষ্টি।
আসুন ইসলামী পবিত্র সম্পর্ক, আদর্শ বিবাহ ও সুখী-দাম্পত্য গড়ার উদ্দেশ্যে আমরা অত্র পুস্তিকার অধ্যায়গুলি বারবার আলোচনা করি, আর দৃঢ়সংকল্প হই যে, আমরা আমাদের জীবন ও দাম্পত্য গড়ব ইসলামী সোনার ছাঁচে। কোন দেশাচার, লোকাচার বা স্ত্রী-আচারের তুফানে আমরা বিচলিত হব না। আমরা চাই ইহকালে অনাবিল শান্তি ও পরকালে অনন্ত সুখ।
হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে সেই তওফীক ও প্রেরণা দান কর, যাতে আমরা তোমার ও তোমার রসূলের আনুগত্যপূর্ণ জীবন ও সুখী দাম্পত্য গড়তে পারি। আর দাম্পত্যের ঐ বিশাল আমানতে যেন খেয়ানত না করে বসি। আমীন।
আব্দুল হামীদ আল-মাদানী
আল-মাজমাআহ, সউদী আরব
২৬/২/৯৭
আল্লাহ তা’আলা পৃথিবী আবাদ রাখার জন্য মানুষকে খলীফারূপে সৃষ্টি করেছেন। তার মধ্যে এমন প্রকৃতি ও প্রবৃত্তি দান করেছেন যাতে সে অতি সহজে নিজের বংশ বৃদ্ধি ও আবাদ করতে পারে। ক্ষুধা-নিবৃত্তি করে যেমন তার নিজের অস্তিত্ব অবশিষ্ট থাকে, তদ্রূপ যৌনক্ষুধা নিবৃত্তি করলে তার বংশ বাকী থাকবে।
এই যৌনক্ষুধা এমন এক ক্ষুধা, যার তাড়নায় ক্ষুধার্ত মানুষ নিজেকে অনেক সময় নিয়ন্ত্রণ ও আয়ত্তে রাখতে পারে না। ক্ষুধা উপশান্ত না হওয়া পর্যন্ত মানুষ প্রকৃতিস্থ হতে পারে না।
অবশ্য উক্ত ক্ষুধা নিবারণের জন্য পৃথিবীতে সাধারণতঃ তিনটি রীতি রয়েছে ;
প্রথমতঃ ‘ফ্রী-সেক্স’-এর পশুবৎ রীতি; যাতে ধর্মীয়, নৈতিক বা লৌকিক কোন প্রকারের বাধা ও নিয়ন্ত্রণ নেই, যখন যেভাবে ইচ্ছা কামপিপাসা দূর করা যায়। যাতে সমাজে সৃষ্টি হয় বিশৃঙ্খলতা এবং বংশে আসে কত শত জারজ।
দ্বিতীয়তঃ সংযম রীতি; যাতে মানুষ ইন্দ্রিয় বাসনাকে নিগৃহীত রাখে। কোন প্রকারের বীর্যক্ষয়কে পাপ মনে করে। এরূপ বৈরাগ্যবাদ প্রকৃতি-ধর্মেরও বিরোধী।
তৃতীয়তঃ নিয়ন্ত্রিত রীতি; গন্ডি-সীমার অভ্যন্তরে থেকে কাম-বাসনাকে মানুষ চরিতার্থ করতে পারে। ঐ সীমা উল্লংঘন করে নিয়ন্ত্রণ-হারা হতে পারে না। এই রীতিই হল মানুষের জন্য প্রকৃতিসিদ্ধ ও ন্যায়পরায়ণ। বিবাহ-বন্ধনের মাঝে সীমিত ও রীতিমত যৌনাচার ও কামবাসনা চরিতার্থ করা যায়। কিন্তু বল্গাহীনভাবে ব্যভিচার করা যায় না। এই নীতিই সমস্ত ঐশীধর্মের নীতি এবং ইসলামের আদর্শ। ইসলাম বিবাহকে বৈধ করেছে এবং ব্যভিচারকে অবৈধ ও হারাম ঘোষণা করেছে। নারী-পুরুষের এই মিলনকে যদি নিয়ন্ত্রিত না করা হত, তাহলে পৃথিবীতে সুশৃঙ্খল সমাজ ও সংসার গড়ে উঠত না। স্থায়ী হত না প্রেম ও সম্প্রীতি। সেই দাম্পত্য গড়ে উঠত না, যাতে থাকে একের অন্যের জন্য শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, স্নেহ, স্বার্থত্যাগ ও উৎসর্গ।
তাইতো প্রয়োজন ছিল ব্যভিচারকে কঠোরভাবে দমন করা। যাতে সমাজের মানুষরা অসভ্য ও উচ্ছৃঙ্খল না হয়ে উঠে, লাগামহীন যৌনাচারে বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যাধি ও মহামারীর প্রাদুর্ভাব না ঘটে এবং মানুষ পশুর পর্যায়ে নেমে না যায়।
তাই তো ইসলামে রয়েছে ব্যভিচারীর জন্য কঠোর শাস্তি-ব্যবস্থা। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
﴿الزَّانِيَةُ وَالزَّانِي فَاجْلِدُوا كُلَّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا مِائَةَ جَلْدَةٍ وَلا تَأْخُذْكُمْ بِهِمَا رَأْفَةٌ فِي دِينِ اللهِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَلْيَشْهَدْ عَذَابَهُمَا طَائِفَةٌ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ﴾
‘‘ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী---ওদের প্রত্যেককে একশত কশাঘাত কর; যদি তোমরা আল্লাহতে ও পরকালে বিশ্বাসী হও, তাহলে আল্লাহর বিধান কার্যকরীকরণে ওদের প্রতি দয়া যেন তোমাদেরকে অভিভূত না করে। আর মু’মিনদের একটি দল যেন ওদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।’’[1]
আর এরপর তাদেরকে এক বছরের জন্য দেশ থেকে বহিষ্কার অথবা কারাদন্ডে দন্ডিত করা হবে।[2]
এ তো হল অবিবাহিত ব্যভিচারী-ব্যভিচারিণীর শাস্তি। বিবাহিতদের শাস্তি হল তাদেরকে কোমর অবধি মাটিতে পুঁতে পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করা।[3]
তদনুরূপ সমকাম বা সমলিঙ্গী-ব্যভিচারকেও ইসলাম হারাম ঘোষণা করেছে। প্রকৃতিগতভাবে পুরুষ নারীর প্রতি এবং নারী পুরুষের প্রতি আসক্ত এবং উভয়েই একে অপরের মিলন লাভের আকাঙ্ক্ষী। কিন্তু এই প্রকৃতির সীমা উল্লংঘন করে এবং দ্বীনী নিয়ন্ত্রণের বেড়া ডিঙ্গিয়ে যারা নির্লজ্জভাবে পুরুষে-পুরুষে ও নারীতে-নারীতে সমকামে নিজেদের যৌনক্ষুধা নিবারণ করে তাদেরও শাস্তি হত্যা।[4]
কৃত্রিম-মৈথুন বা হস্তমৈথুন অত বড় মহাপাপ না হলেও যা স্বাস্থ্যের পক্ষে দারুন ক্ষতি ও হানিকর এবং তা হারাম। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَالَّذِيْنَ هُمْ لِفُرُوْجِهِمْ حَافِظُوْنَ، إِلاَّ عَلى أَزْوَاجِهِمْ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُوْمِيْنَ، فَمَنِ ابْتَغَى وَرَاءَ ذلِكَ فَأُولئِكَ هُمُ الْعَادُوْنَ
অর্থাৎ, ‘‘যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে, তবে নিজেদের পত্নী অথবা অধিকারভুক্ত দাসীদের ([5]) ক্ষেত্রে অন্যথা করলে তারা নিন্দার্হ হবে না এবং তাছাড়া অন্যান্য পথ অবলম্বন করলে তারা হবে সীমালংঘনকারী।’’[6]
সুতরাং কৃত্রিম মৈথুন এক প্রকার সীমালংঘন; যা মহাপাপ। তাছাড়া আল্লাহর রসূল (ﷺ) যখন সামর্থ্যবান যুবকদেরকে বিবাহ করতে বললেন, তখনই অসামর্থ্যবান যুবককে রোযা রাখার নির্দেশ দিলেন। যাতে যৌন-তাড়নায় যুবকদল কোনরূপ বেয়াড়া না হয়ে যায়। পক্ষান্তরে এতে হয়তো ক্ষণিকের যৌনস্বাদ আছে কিন্তু এর পশ্চাতে আছে মহালাঞ্ছনা, মহাপরিতাপ।
শরীয়ত যেমন সর্বপ্রকার ব্যভিচারকে হারাম ঘোষণা করেছে তেমনি ব্যভিচারের কাছ ঘেঁসতে, অবৈধ যৌনাচারের নিকটবর্তী হতে নিষেধ এবং এর সমস্ত ছিদ্র-পথ বন্ধ করতে আদেশ করেছে। কারণ, যে পথ হারামে নিয়ে যায় সে পথে চলাও হারাম।
[2] (বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩৫৫৫নং)
[3] (বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩৫৫৫, ৩৫৫৭নং)
[4] (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩৫৭৫নং)
([5]) অধিকারভুক্ত দাসী বলে ক্রীতদাসী ও কাফের যুদ্ধবন্দিবনীকে বুঝানো হয়েছে। এখানে কাজের মেয়ে, দাসী। খাদেমা বা চাকরানী উদ্দেশ্য নয়।
[6] (সূরা আল-মু’মিনূন (২৩) : ৫-৭)
বেগানা ([1]) নারী-পুরুষের কোন নির্জন স্থানে একাকী বাস, কিছু ক্ষণের জন্যও লোক-চক্ষুর অন্তরালে, ঘরের ভিতরে, পর্দার আড়ালে একান্তে অবস্থান শরীয়তে হারাম। যেহেতু তা ব্যভিচার না হলেও ব্যভিচারের নিকটবর্তী করে, ব্যভিচারের ভূমিকা অবতারণায় সহায়িকা হয়। আল্লাহর নবী (ﷺ) বলেন, ‘‘কোন পুরুষ যেন কোন নারীর সাথে একান্তে গোপনে অবস্থান না করে। কারণ, শয়তান উভয়ের কুটনী হয়।’’[2]
এ ব্যাপারে সমাজে অধিক শৈথিল্য পরিলক্ষিত হয় দেওর-ভাবী ও শালী-বুনাই-এর ক্ষেত্রে। অথচ এদের মাঝেই বিপর্যয় ঘটে অধিক। কারণ ‘পর চোরকে পার আছে, ঘর চোরকে পার নাই।’ তাই তো আল্লাহর নবী (ﷺ) মহিলাদের পক্ষে তাদের দেওরকে মৃত্যুর সাথে তুলনা করেছেন।’’[3]
অতএব দেওরের সাথে মায়ের বাড়ি, ডাক্তারখানা, অনুরূপ বুনাই-এর সাথে বোনের বাড়ি, ডাক্তারখানা বা কোন বিলাস-বিহারে যাওয়া-আসা এক মারাত্মক বিস্ফোরক প্রথা বা ফ্যাশন।
তদনুরূপ তাদের সাথে কোন কামরা বা স্থানে নির্জনতা অবলম্বন, বাড়ির দাসী বা দাসের সাথে গৃহকর্তা বা কর্ত্রী অথবা তাদের ছেলে-মেয়ের সাথে নিভৃতবাস, বাগদত্ত বরকনের একান্তে আলাপ বা গমন, বন্ধু-বান্ধবীর একত্রে নির্জনবাস, লিফ্টে কোন বেগানা যুবক-যুবতীর একান্তে উঠা-নামা, ডাক্তার ও নার্সের একান্তে চেম্বারে অবস্থান, টিউটর ও ছাত্রীর একান্তে নির্জনবাস ও পড়াশোনা, স্বামীর অবর্তমানে কোন বেগানা আত্মীয় বা বন্ধুর সাথে নির্জনবাস, ট্যাক্সি ড্রাইভারের সাথে বা রিক্সায় রিক্সাচালকের সাথে নির্জনে গমন, পীর ও মহিলা মুরীদের একান্তে বায়াত ও তা’লীম প্রভৃতি একই পর্যায়ের; যাদের মাঝে শয়তান কুট্নী সেজে অবৈধ বাসনা ও কামনা জাগ্রত করে কোন পাপ সংঘটিত করতে চেষ্টা করে।[4]
বারুদের নিকট আগুন রাখা হলে বিস্ফোরণ তো হতেই পারে। যেহেতু মানুষের মন বড় মন্দপ্রবণ এবং দুর্নিবার কামনা ও বাসনা মানুষকে অন্ধ ও বধির করে তোলে। তা ছাড়া নারীর মাঝে রয়েছে মনোরম কমনীয়তা, মোহনীয়তা এবং চপলতা। আর শয়তান তো মানুষকে অসৎ কাজে ফাঁসিয়ে দিয়ে আনন্দবোধ করে থাকে।
অনুরূপ কোন বেগানা মহিলার সাথে নির্জনে নামায পড়াও বৈধ নয়।[5]
তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীর নিকট নিজের সন্তান দেখতে গিয়ে বা কোন কাজে গিয়ে তার সাথে নির্জনতাও অনুরূপ। কারণ, সে আর স্ত্রী নেই। আর এমন মহিলার সাথে বিপদের আশঙ্কা বেশী। শয়তান তাদেরকে তাদের পূর্বের স্মৃতিচারণ করে ফাঁসিয়ে দিতে পারে।[6]
বৃদ্ধ-বৃদ্ধার আপোসে বা তাদের সাথে যুবতী-যুবকের নির্জনবাস, কোন হিজড়ে বা খাসি করা নারী-পুরুষের আপোষে বা তাদের সাথে যুবক-যুবতীর, একাধিক মহিলার সাথে কোন একটি যুবক অথবা একাধিক পুরুষের সাথে এক মহিলার, কোন সুশ্রী কিশোরের সাথে যুবকের নির্জনবাসও অবৈধ। প্রয়োজন হলে এবং মহিলার মাহরাম না পাওয়া গেলে কোন মহিলার জামাআতে একজন পুরুষ থেকে সফর আদি করায় অনেকের নিকট অনুমতি রয়েছে।[7]
প্রকাশ যে, মহিলার সাথে কোন নাবালক শিশু থাকলে নির্জনতা কাটে না।
ব্যভিচার থেকে সমাজকে দূরে রাখার জন্যই ইসলামে নারী-পুরুষে অবাধ মিলা-মিশা, একই অফিসে, মেসে, ক্লাশরুমে, বিয়ে ও মরা বাড়িতে, হাসপাতালে, বাজারে প্রভৃতি ক্ষেত্রে উভয় জাতির একত্রে জমায়েত অবৈধ।[8]
মুসলিম নারীর শিক্ষার অর্থ এই নয় যে, তাকে বড় ডিগ্রী, সুউচ্চ পদ, মোটা টাকার চাকুরী পেতে হবে। তার শিক্ষা জাতিগঠনের জন্য, সমাজ গড়ার জন্য, মুসলিম দেশ ও পরিবেশ গড়ার জন্য যতটুকু দরকার ততটুকু শিখতে পারলেই যথেষ্ট; যদিও তা ঘরে বসেই হয়। তা ছাড়া পৃথক গার্ল্স স্কুল-কলেজ না থাকলে মিশ্র শিক্ষাঙ্গনে মুসলিম নারীর শিক্ষায় ‘জল খেতে গিয়ে ঘটি হারিয়ে যাওয়া’র ঘটনাই অধিক ঘটে থাকে; যে সব শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে শিক্ষিত হওয়া যায় ঠিকই, কিন্তু আদর্শ মুসলিম হওয়া যায় না। নারীর সবনির্ভরশীল হয়ে জীবন-যাপন করায় গর্ব আছে ঠিকই, কিন্তু সুখ নেই। প্রকৃতির সাথে লড়ে আল্লাহর আইনকে অবজ্ঞা করে নানান বিপত্তি ও বাধাকে উল্লংঘন করে অর্থ কামিয়ে স্বাধীনতা আনা যায় ঠিকই; কিন্তু শান্তি আনা যায় না। শান্তি আছে স্বামীর সোহাগে, স্বামীর প্রেম, ভালোবাসা ও আনুগত্যে। পরিত্যক্তা বা নিপীড়িতা হলে এবং দেখার কেউ না থাকলে মুসলিম রাষ্ট্র ও সমাজে তার কালাতিপাত করার যথেষ্ট সহজ উপায় আছে। যেখানে নেই সেখানকার কথা বিরল। অবশ্য দ্বীন ও দুনিয়ার প্রকৃত মূল্যায়ন করতে পারলে এ সমস্যার সমাধান সহজ হয়ে উঠবে। যারা পরকালের চিরসুখে বিশ্বাসী তারা জাগতিক কয়েকদিনের সুখ-বিলাসের জন্য দ্বীন ও ইজ্জত বিলিয়ে দেবে কেন?[9]
ব্যভিচারের প্রতি নিকটবর্তী হওয়ার আর এক পদক্ষেপ মহিলাদের একাকিনী কোথাও বাইরে যাওয়া-আসা। তাই ‘সুন্দরী চলেছে একা পথে, সঙ্গী হইলে দোষ কি তাতে?’ বলে বহু লম্পট তাদের পাল্লায় পড়ে থাকে, ধর্ষণের হাত হতে অনেকেই রক্ষা পায় না, পারে না নিজেকে ‘রিমার্ক’ ও ‘টিস্’ এর শিলাবৃষ্টি হতে বাঁচাতে। এর জন্যই তো সমাজ-বিজ্ঞানী রসূল (ﷺ) বলেন,
وَلاَ تُسَافِرُ المَرْأةُ إِلاَّ مَعَ ذِي مَحْرَمٍ.
‘‘মহিলা যেন এগানা পুরুষ ছাড়া একাকিনী সফর না করে।’’ (বুখারী ৫২৩৩, মুসলিম ১৩৪১ন)
المَرأَةُ عَورَةٌ فَإِذَا خَرَجَتِ اسْتَشْرَفَهَا الشَّيطَان.
‘‘রমণী গুপ্ত জিনিস; সুতরাং যখন সে (বাড়ি হতে) বের হয়, তখন শয়তান তাকে পুরুষের দৃষ্টিতে রমণীয় করে দেখায়।’’[10]
ব্যভিচারের কাছে যাওয়ার আর এক পদক্ষেপ কোন এমন মহিলার নিকট কোন গম্য আত্মীয় বা অন্য পুরুষের গমন যার স্বামী বর্তমানে বাড়িতে নেই, বিদেশে আছে। কারণ এমন স্ত্রীর মনে সাধারণতঃ যৌনক্ষুধা একটু তুঙ্গে থাকে, তাই বিপদ ঘটাই স্বাভাবিক। স্ত্রী বা ঐ পুরুষ যতই পরহেযগার হোক, তবুও না। এ বিষয়ে নীতি-বিজ্ঞানী (ﷺ) বলেন,
لَا تَلِجُوا عَلَى الْمُغِيبَاتِ فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَجْرِي مِنْ أَحَدِكُمْ مَجْرَى الدَّمِ.
‘‘তোমরা সেই মহিলাদের নিকট গমন করো না যাদের স্বামীরা বিদেশে আছে। কারণ, শয়তান তোমাদের রক্তশিরায় প্রবাহিত হয়।’’[11]
সাহাবী (রাঃ) বলেন, ‘‘আল্লাহর নবী (ﷺ) আমাদেরকে নিষেধ করেছেন যে, আমরা যেন মহিলাদের নিকট তাদের স্বামীদের বিনা অনুমতিতে গমন না করি।’’[12]
অনুরূপ কোন প্রকার সেন্ট বা পারফিউমড্ ক্রিম অথবা পাওডার ব্যবহার করে বাইরে পুরুষদের সম্মুখে (পর্দার সাথে হলেও) যাওয়া ব্যভিচারের নিকটবর্তী হওয়ার এক ভূমিকা। যেহেতু যুবকের প্রবৃত্তি এই যে, মহিলার নিকট হতে সুগন্ধ পেলে তার যৌন-চেতনা উত্তেজনায় পরিণত হয়। যার জন্যই সংস্কারক নবী (ﷺ) বলেন,
كُلُّ عَيْنٍ زَانِيَةٌ وَالْمَرْأَةُ إِذَا اسْتَعْطَرَتْ فَمَرَّتْ بِالْمَجْلِسِ فَهِيَ كَذَا وَكَذَا يَعْنِي زَانِيَةً.
‘‘প্রত্যেক চক্ষুই ব্যভিচারী। আর রমণী যদি সুগন্ধি ব্যবহার করে কোন (পুরুষের) মজলিসের পাশ দিয়ে পার হয়ে যায় তাহলে সে এক বেশ্যা।’’[13]
এমন কি এই অবস্থায় নামাযের জন্য যেতেও নিষিদ্ধ।[14]
প্রিয় নবী (ﷺ) বলেন,
أَيُّمَا امْرَأَة تَطَيَّبَت ثُمَّ خَرَجَت إِلَى المسجِدِ لَم تُقبَل لهَا صَلاَةٌ حَتى تَغتَسِل.
‘‘যে মহিলা সেন্ট্ ব্যবহার করে মসজিদে যায়, সেই মহিলার গোসল না করা পর্যন্ত কোন নামায কবুল হবে না।’’ (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ২৭০৩নং)
কোন গম্য পুরুষের সাথে মহিলার প্রগল্ভতার সাথে কিংবা মোহনীয় কণ্ঠে সংলাপ ও কথোপকথন করাও ব্যভিচারের নিকটবর্তীকারী পথসমূহের অন্যতম ছিদ্রপথ। এ বিপজ্জনক বিষয়ে সাবধান করে আল্লাহ তা’আলা মহিলাদের উদ্দেশ্যে বলেন,
﴿إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ﴾
‘‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তবে পরপুরুষদের সাথে কোমল কণ্ঠে এমনভাবে কথা বলো না, যাতে ব্যাধিগ্রস্ত অন্তরের মানুষ প্রলুব্ধ হয়।’’[15]
এই জন্যই ইমাম ভুল করলে পুরুষ মুক্তাদীরা তসবীহ বলে স্মরণ করাবে, আর মহিলারা হাততালির শব্দে, তসবীহ বলেও নয়! যাতে নারীর কণ্ঠসবরে কতক পুরুষের মনে যৌনানুভূতি জাগ্রত না হয়ে উঠে। সুতরাং নারী-কণ্ঠের গান তথা অশ্লীল গান যে কি, তা রুচিশীল মানুষদের নিকট সহজে অনুমেয়।
এমন বহু হতভাগী মহিলা আছে, যারা স্বামীর সাথে কর্কশসবরে কথা বলে কিন্তু কোন উপহাসের পাত্রের (?) সাথে মোহন-সূরে সংলাপ ও উপহাস করে। এরা নিশ্চয়ই পরকালেও হতভাগী।
তদনুরূপ বেগানা নারীর সাথে মুসাফাহা বৈধ নয়। হাতে মোজা, দস্তানা বা কাপড়ের কভার রেখেও নয়। কামমনে হলে তা হাতের ব্যভিচার।[16]
করতল চেপে ধরা এবং সুরসুরি দেওয়াও হল তার ইঙ্গিত! কোন গম্য নারীর দেহ স্পর্শ, বাসে-ট্রেনে, হাটে-বাজারে, স্কুলে-কলেজে প্রভৃতি ক্ষেত্রে গায়ে গা লাগিয়ে চলা বা বসা, নারী-পুরুষের ম্যাচ খেলা ও দেখা প্রভৃতি ইসলামে হারাম। কারণ, এ সবগুলিও অবৈধ যৌনাচারের সহায়ক। সমাজ সংস্কারক নবী (ﷺ) বলেন,
لأَنْ يُطْعَنَ فِي رَأْسِ رَجُلٍ بِمِخْيَطٍ مِنْ حَدِيدٍ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَمَسَّ امْرَأَةً لا تَحِلُّ لَهُ.
‘‘কোন ব্যক্তির মাথায় লৌহ সুচ দ্বারা খোঁচা যাওয়া ভালো, তবুও যে নারী তার জন্য অবৈধ তাকে স্পর্শ করা ভালো নয়।’’[17]
বাইরে বের হয়ে রমণীর রমণীয়, মোহনীয় ও সৌন্দর্য-গর্বজনক চপল মধুর চলনও ব্যভিচার ও যৌন উত্তেজনার সহায়ক কর্ম। এরা সেই নারী যাদের প্রসঙ্গে নবী (ﷺ) বলেছেন, ‘‘তারা পুরুষকে আকৃষ্ট করে এবং নিজেরাও আকৃষ্ট হয়; তারা জাহান্নামী।’’ [18]
অনুরূপ খট্খট্ শব্দবিশিষ্ট জুতো নিয়ে চট্পটে চলন, দেহের অলঙ্কার যেমন চুড়ি, খুঁটকাটি, নুপুর, তোরা প্রভৃতির বাজনা বাজিয়ে লাস্যময় চলনও যুবকের মনে যৌন-আন্দোলন আনে। সুতরাং এ কর্ম যে হারাম তা বলাই বাহুল্য। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
﴿وَلاَ يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ﴾
‘‘তারা যেন তাদের গোপন আভরণ প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদক্ষেপ না করে----।’’[19]
যেমন পথে চলার সময় পথের মাঝে চলা নারীর জন্য বৈধ নয়।[20]
মহিলাদের জন্য সবগৃহে গোসলখানা (বাথরুম) করা ওয়াজেব (সিমেন্টের হওয়া জরুরী নয়) এবং ফাঁকা পুকুরে, নদীতে, ঝর্ণায়, সমুদ্রতীরে বা সাধারণ গোসলখানায় গোসল করা তাদের জন্য হারাম। যেহেতু সমাজ-বিজ্ঞানী নবী (ﷺ) বলেছেন,
أَيُّمَا امْرَأَةٍ وَضَعَتْ ثِيَابَهَا فِي غَيْرِ بَيْتِهَا فَقَدْ هَتَكَتْ مَا بَيْنَهَا وَبَيْنَ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ أَوْ سِتْرَ مَا بَيْنَهَا وَبَيْنَ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ.
‘‘যে নারী সবগৃহ ( স্বামীগৃহ বা মায়ের বাড়ি) ছাড়া অন্য স্থানে নিজের পর্দা রাখে (কাপড় খোলে) আল্লাহ তার পর্দা ও লজ্জাশীলতাকে বিদীর্ণ করে দেন। (অথবা সে নিজে করে দেয়।)[21]
مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلَا يُدْخِلْ حَلِيلَتَهُ الْحَمَّامَ.
‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহতে ও পরকালে বিশ্বাস রাখে সে যেন তার স্ত্রীকে সাধারণ গোসলখানায় যেতে না দেয়।’’[22]
সবগৃহ ছেড়ে পরকীয় গৃহে বাস, বান্ধবী বা বান্ধবীর স্বামীর বাড়িতে রাত্রিবাস ইত্যাদিও বিপজ্জনক ব্যভিচারের ছিদ্রপথ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে মহিলা নিজের স্বামীগৃহ ছাড়া অন্য গৃহে নিজের কাপড় খোলে সে আল্লাহ আয্যা অজাল্লা ও তার নিজের মাঝে পর্দা বিদীর্ণ করে ফেলে।’’[23]
একই কারণে অপরের লজ্জাস্থান (নাভি হতে হাঁটু পর্যন্ত স্থান) দেখা এবং একই কাপড়ে পুরুষে-পুরুষে বা মহিলায়-মহিলায় শয়ন করাও নিষিদ্ধ।[24]
পর পুরুষের দৃষ্টিতে মহিলার সর্বশরীর লজ্জাস্থান। বিশেষ করে চক্ষু এমন এক অঙ্গ যার দ্বারা বিপত্তির সূচনা হয়। চোখাচোখি থেকে শুরু হয়, কিন্তু শেষ হয় গলাগলিতে। এই ছোট্ট অঙ্গার টুকরা থেকেই সূত্রপাত হয় সর্বগ্রাসী বড় অগ্নিকান্ডের। দৃষ্টির কথাই কবি বলেন,
‘‘আঁখি ও তো আঁখি নহে, বাঁকা ছুরি গো
কে জানে সে কার মন করে চুরি গো!’’
প্রেম জগতে চক্ষু কথা ব’লে এমন বিষয় বুঝিয়ে থাকে যা জিহ্বা প্রকাশ করতে অক্ষম। চোখের কোণেই আছে যাদুর রেখা।
‘‘নয়না এখানে যাদু জানে সখা এক আঁখি ইশারায়
লক্ষ যুগের মহা-তপস্যা কোথায় উবিয়া যায়!’’
‘নজরবান’ মেরে অনেকে অনেককে ঘায়েল করে থাকে। চোরা চাহনিতে অনেকেই বুঝিয়ে থাকে গোপন প্রণয়ের সূক্ষ্ম ইঙ্গিত।
‘‘--গোপন প্রিয়ার চকিত চাহনি; ছল করে দেখা অনুখন,
--চপল মেয়ের ভালোবাসা তার কাঁকন চুড়ির কন্কন্।’’
সুতরাং এ দৃষ্টি বড় সাংঘাতিক বিপত্তি। যার জন্যই আল্লাহপাক বলেন,
﴿قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ- وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ﴾
‘‘মুমিন পুরুষদেরকে বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে (নজর ঝুকিয়ে চলে) এবং তাদের যৌনাঙ্গকে সাবধানে সংযত রাখে; এটিই তাদের জন্য উত্তম। ওরা যা করে, আল্লাহ সে বিষয়ে অবহিত। আর মুমিন নারীদেরকে বল, তারাও যেন নিজেদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে ও লজ্জাস্থান সংরক্ষা করে---।’’[25]
প্রিয় নবী (ﷺ) বলেন, ‘‘(কোন রমণীর উপর তোমার দৃষ্টি পড়লে তার প্রতি) বারবার দৃক্পাত করো না। বরং নজর সত্বর ফিরিয়ে নিও।’’[26]
যেহেতু ‘‘চক্ষুও ব্যভিচার করে এবং তার ব্যভিচার হল (কাম)দৃষ্টি।’’[27]
সুতরাং এ দৃষ্টিকে ছবি থেকেও সংযত করতে হবে এবং পরপুরুষ থেকে আড়ালে রাখতে হবে। যাতে একহাতে তালি নিশ্চয়ই বাজবে না। আর এই বড় বিপদ সৃষ্টিকারী অঙ্গ চোখটি থাকে চেহারায়। চোখাচোখি যাতে না হয়, তাই তো নারীর জন্য জরুরী তার চেহারাকেও গোপন করা।
অত্যন্ত সখীত্বের খাতিরে হলেও বিনা পর্দায় সখীতে-সখীতে দৃঢ় আলিঙ্গন ও একে অপরকে নিজ নিজ সৌন্দর্য প্রদর্শন করা বৈধ নয়। কারণ এতে সাধারণতঃ প্রত্যেক সখী তার সখীর দেহ-সৌষ্ঠব নিজের স্বামীর নিকট বর্ণনা করলে স্বামী মনের পর্দায় তার স্ত্রীর ঐ সখীর বিলক্ষণ রূপ-দৃশ্য নিয়ে মনোতৃপ্তি লাভ করে থাকে।[28] হয়তো বা মনের অলক্ষ্যেই এই পুরুষ তার হৃদয়ের কোন কোণে ঐ মহিলার জন্য আসন পেতে দেয়। আর পরবর্তীতে তাকে দেখার ও কাছে পাওয়ার মত বাসনাও জাগ্রত করে তোলে।
নোংরা পত্র-পত্রিকা পাঠ, অশ্লীল ছায়াছবি ও থিয়েটার-যাত্রা দর্শনও একই পর্যায়ের; যাতে ধবংস হয় তরুণ-তরুণীর চরিত্র, নোংরা হয়ে উঠে পরিবেশ।
স্বামী-স্ত্রীর মিলন-রহস্য প্রভৃতি জানার জন্য সঠিক সময় হল বিবাহের পর অথবা বিবাহের পাকা দিন হওয়ার পর। নচেৎ এর পূর্বে রতি বা কামশাস্ত্র পাঠ করে বিবাহে দেরী হলে মিলনতৃষ্ণা যে পর্যায়ে পৌঁছায় তাতে বিপত্তি যে কোন সময়ে ঘটতে পারে।
কারো রূপ, দ্বীনদারী প্রভৃতির প্রশংসা শুনে তাকে মনে মনে ভালোবেসে ফেলা দূষণীয় নয়। তাকে পেতে বৈধ উপায় প্রয়োগ করা এবং বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ করে সুখের সংসার গড়া উত্তম। কিন্তু অবৈধভাবে তাকে দেখা, পাওয়া, তার কথা শোনা ও তার সান্নিধ্যলাভের চেষ্টা করা অবশ্যই সীমালংঘন। অবৈধ বন্ধুত্ব ও প্রণয়ে পড়ে টেলিফোনে সংলাপ ও সাক্ষাৎ প্রভৃতি ইসলামে হারাম।
যুবক-যুবতীর ঐ গুপ্ত ভালোবাসা তো কেবল কিছু দৈহিক সুখ লুটার জন্য। যার শুরুতেও চক্ষে অশ্রু ঝরে এবং শেষেও। তবে শুরুতে ঝরে আনন্দাশ্রু, আর শেষে উপেক্ষা ও লাঞ্ছনার। কারণ, ‘কপট প্রেম লুকোচুরি, মুখে মধু, হূদে ছুরি’ই অধিকাংশ হয়। এতে তরুণী বুঝতে পারে না যে, প্রেমিক তার নিকট থেকে যৌনতৃপ্তি লাভ ক’রে তাকে বিনষ্ট ক’রে চুইংগামের মত মিষ্টতা চুষে নিয়ে শেষে আঠাল পদার্থটিকে ছুঁড়ে ফেলে দেবে।
‘‘বন্ধু গো যেও ভুলে-
প্রভাতে যে হবে বাসি, সন্ধ্যায় রেখো না সে ফুল তুলে।
উপবনে ত্ব ফোটে যে গোলাপ প্রভাতেই তুমি জাগি,
জানি, তার কাছে যাও শুধু তার গন্ধ-সুষমা লাগি।’’
সুতরাং এ বিষয়ে সতর্ক হওয়া উচিৎ মুসলিম তরুণীকে এবং তার অভিভাবককেও। কারণ, ‘বালির বাঁধ, শঠের প্রীতি, এ দুয়ের একই রীতি।’
[2] (তিরমিযী, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩১১৮নং)
[3] (বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩১০২নং)
[4] (ইলা রাববাতিল খুদূর, আবু আনাস আলী ৩৫পৃঃ, তামবীহাতুল মু’মিনাত, সালেহ আল ফাউযান ১৬৭-১৬৮ পৃঃ)
[5] (জামিউ আহকামিন নিসা, মুস্তাফা আল আদাবী ১/৩৬০)
[6] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ২৮/২৭০)
[7] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ২৮/২৪৫-২৭০)
[8] (ইলা রাববাতিল খুদূর ৪১-৪২পৃঃ)
[9] (রাকানি ৩১পৃঃ, খামসূনা যুহরাহ মিন হাক্বলিন নুস্হ, আব্দুল আযীয আলমুকবিল১৬পৃঃ)
[10] (সহীহ তিরমিযী ৯৩৬নং)
[11] (সহীহ তিরমিযী ৯৩৫নং, সহীহ ইবনে মাজাহ, আল্লামা আলবানী ১৭৭৯নং)
[12] (সহীহ তিরমিযী ২২৩০নং)
[13] (সহীহ তিরমিযী, আল্লামা আলবানী ২২৩৭নং)
[14] (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ, আল্লামা আলবানী ২৭০২নং)
[15] (সূরা আল-আহযাব (৩৩) : ৩২)
[16] (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৪১২৬নং)
[17] (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ, আলবানী ২২৬ নং)
[18] (মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩৫২৪নং, ফামু ১৯-২০পৃঃ)
[19] (সূরা আন-নূর (২৪) : ৩১)
[20] (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ৮৫৬নং)
[21] (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ২৭০৮নং, আদাবুয যিফাফ, শায়খ আলবানী ১৩৯পৃঃ)
[22] (হাকেম, মুস্তাদরাক, মুসনাদে আহমদ, তিরমিযী, নাসাঈ, আদাবুয যিফাফ ১৩৯পৃঃ)
[23] (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ২৭১০নং)
[24] (সহীহ তিরমিযী ২২৪৩নং)
[25] (সূরা আন-নূর (২৪) : ৩০-৩১)
[26] (সহীহ তিরমিযী ২২২৮, ২২২৯নং)
[27] (বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৮৬নং)
[28] (সহীহ তিরমিযী ২২৪৩নং)
ব্যভিচারের ছিদ্রপথ বন্ধ করার আর এক উপায় হল পর্দা। রমণীর দেহ-সৌষ্ঠব প্রকৃতিগতভাবেই রমণীয়। কামিনীর রূপলাবণ্য এবং তদুপরি তার অঙ্গরাগ বড় কমনীয়; যা পুরুষের কামানল প্রজ্জলিত করে। তাই পুরুষের দৃষ্টির অন্তরালে থেকে নিজের মান ও মর্যাদা রক্ষা করতে নারী জাতির প্রতি সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর এই বিধান এল। এই জন্যই কোন গম্য (যার সাথে নারীর কোনও সময়ে বিবাহ বৈধ হতে পারে এমন) পুরুষের দৃষ্টিতে তার সৌন্দর্য ও লাবণ্য প্রকাশ করতে পারে না। পক্ষান্তরে যার সাথে নারীর কোনও কালে বিবাহ বৈধ নয় এমন পুরুষের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারে। কারণ এদের দৃষ্টিতে কাম থাকে না। আর যাদের থাকে তারা মানুষ নয়, পশু। (কাদের সাথে কোনও কালে বিবাহ বৈধ নয় তাদের কথা পরে আলোচিত হবে।) অনুরূপ নারীর রূপ বিষয়ে অজ্ঞ বালক, যৌনকামনাহীন পুরুষ এবং অধিকারভুক্ত ক্রীতদাসের সাথে মহিলা দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারে।
পর্দার ব্যাপারে আল্লাহর সাধারণ নির্দেশঃ-
﴿وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى﴾
‘‘(হে নারী জাতি!) তোমরা সবগৃহে অবস্থান কর এবং প্রাক্-ইসলামী (জাহেলিয়াতী) যুগের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়িও না।’’[1]
﴿يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلابِيبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَنْ يُعْرَفْنَ فَلا يُؤْذَيْنَ﴾
‘‘হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রী, কন্যা ও মুসলিম রমণীগণকে বল, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের (মুখমন্ডলের) উপর টেনে নেয়। এতে (ক্রীতদাসী থেকে) তাদেরকে চেনা সহজতর হবে; ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। (লম্পটরা তাদেরকে উত্যক্ত করবে না।)’’[2]
﴿وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ﴾
‘‘মুমিন নারীদেরকে বল, তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি সংযত করে ও লজ্জাস্থান হিফাযত করে এবং যা প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের (অন্যান্য) আভরণ প্রদর্শন না করে, তাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশ যেন মাথার কাপড় (উড়না অথবা চাদর) দ্বারা আবৃত করে।[3]
﴿وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعاً فَاسْأَلوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ﴾
‘‘(হে পুরুষগণ!) তোমরা তাদের (নারীদের) নিকট হতে কিছু চাইলে পর্দার অন্তরাল হতে চাইবে। এ বিধান তোমাদের এবং তাদের হৃদয়ের জন্য অধিকতর পবিত্র।’’[4]
সুতরাং মুসলিম নারীর নিকট পর্দাঃ- আল্লাহ ও তদীয় রসূলের আনুগত্য।
পর্দা, প্রেম ও চরিত্রের পবিত্রতা, অনাবিলতা ও নিষ্কলঙ্কতা।
পর্দা, নারীর নারীত্ব, সতীর সতীত্ব, সম্ভ্রম ও মর্যাদা।
পর্দা, লজ্জাশীলতা, অন্তর্মাধুর্য ও সদাচারিতা।
পর্দা, মানবরূপী শয়তানের দৃষ্টি থেকে রক্ষাকবচ।
পর্দা, ইজ্জত হিফাযত করে, অবৈধ প্রণয়, ধর্ষণ, অশ্লীলতা ও ব্যভিচার দূর করে, নারীর মান ও মূল্য রক্ষা করে। জিনিস দামী ও মূল্যবান হলেই তাকে গোপনে লুকিয়ে রাখা হয়। যত্রেতত্রে কাঁচ পাওয়া যায় বলেই তার কোন কদর নেই। কিন্তু কাঞ্চন পাওয়া যায় না বলেই তার বড় কদর। পর্দানশীন নারী কাঁচ নয়; বরং কাঞ্চন, সুরক্ষিত মুক্তা।
পর্দা, নারীকে কাফের ও ক্রীতদাসী থেকে বাছাই করে সম্ভ্রান্তা মুসলিম নারীরূপে চিহ্নিত করে।
পর্দা, আল্লাহর গযব ও জাহান্নামের আগুন থেকে পর্দা।
নারীদের প্রধান শত্রু তার সৌন্দর্য ও যৌবন। আর পর্দা তার লালকেল্লা।
ইসলামের সুসভ্য দৃষ্টিতে নারীর পর্দা ও সভ্য লেবাসের কয়েকটি শর্ত নিম্নরূপঃ-
১- মুসলিম মহিলা যে পোশাক ব্যবহার করবে তাতে যেন পর্দা পাওয়া যায়; অর্থাৎ সেই পোশাক যেন তার সারা দেহকে আবৃত করে। সুতরাং যে লেবাসে নারীর কেশদাম, গ্রীবা, বক্ষদেশ, উদর ও পৃষ্ঠদেশ (যেমন, শাড়ি ও খাটো ব্লাউজে) এবং হাঁটু ও জাং (যেমন, স্ক্যার্ট্, ঘাগরা, ফ্রক্ ইত্যাদিতে) প্রকাশিত থাকে তা (সাধারণতঃ গম্য পুরুষদের সম্মুখে) পরিধান করা হারাম।
২- এই লেবাস যেন সৌন্দর্যময় ও দৃষ্টি-আকর্ষী না হয়। সুতরাং কামদার (এমব্রয়ডারি করা) চকচকে রঙিন বোরকাও পরা বৈধ নয়।
৩- এমন পাতলা না হয় যাতে ভিতরের চামড়ার রঙ নজরে আসে। অতএব পাতলা শাড়ি, ওড়না প্রভৃতি মুসলিম মহিলার ড্রেস নয়। প্রিয় নবী (ﷺ) বলেন,
صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمَا قَوْمٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ الْبَقَرِ يَضْرِبُونَ بِهَا النَّاسَ وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلاَتٌ مَائِلاَتٌ رُءُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْمَائِلَةِ لاَ يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ وَلاَ يَجِدْنَ رِيحَهَا وَإِنَّ رِيحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ كَذَا وَكَذَا.
‘‘দুই শ্রেণীর মানুষ জাহান্নামের অধিবাসী; যাদেরকে আমি দেখিনি। (তারা ভবিষ্যতে আসবে।) প্রথম শ্রেণী (অত্যাচারীর দল) যাদের সঙ্গে থাকবে গরুর লেজের মত চাবুক, যদ্বারা তারা লোককে প্রহার করবে। আর দ্বিতীয় শ্রেণী হল সেই নারীদল; যারা কাপড় তো পরিধান করবে, কিন্তু তারা বস্ত্ততঃ উলঙ্গ থাকবে, যারা পুরুষদের আকৃষ্ট করবে এবং নিজেরাও তাদের প্রতি আকৃষ্ট হবে, যাদের মস্তক (খোপা বাঁধার কারণে) উটের হিলে যাওয়া কুঁজের মত হবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, তার গন্ধও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধ এত এত দূরবর্তী স্থান থেকেও পাওয়া যাবে।’’[5]
৪- এমন টাইট্ফিট বা আঁট-সাঁট না হয় যাতে দেহাঙ্গের উচ্চতা ও নীচতা এবং আকার ও আকৃতি কাপড়ের উপরেও বুঝা যায়। তাই এমন চুস্ত্ ও ফ্যাশনের লেবাস মুসলিম রমণী পরিধান করতে পারে না, যাতে তার সুডৌল স্তনযুগল, সুউচ্চ নিতম্ব, সরু কোমর প্রভৃতির আকার প্রকাশ পায়।
টাইট্ফিট ইত্যাদি লেবাস যে বড় ফিতনা সৃষ্টিকারী ও হারাম তা বিভিন্ন লেডীস অন্তর্বাস কোম্পানীর নামই সাক্ষ্য দেয়। যেমন, Look me, Take me, Follow me, Buy me, Touch me, Kiss me প্রভৃতি। অবশ্য যে মহিলারা এই ধরনের বেলেল্লাপনা পোশাক পরে নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়ায়, তাদের মনও ঐ কথাই বলে।
৫- এই লেবাস যেন পুরুষদের অনুকৃত বা অনুরূপ না হয়। সুতরাং প্যান্ট, শার্ট প্রভৃতি পুরুষদের মত পোশাক কোন মুসলিম মহিলা ব্যবহার করতে পারে না। যেহেতু ‘‘পুরুষদের বেশধারিণী নারীদের উপর আল্লাহর অভিশাপ থাকে।’’[6]
৬- তদনুরূপ তা যেন কাফের মহিলাদের অনুকৃত বা অনুরূপ না হয়।
প্রকাশ যে, ঢিলে ম্যাক্সি ও শেলোয়ার কামীস এবং তার উপর অস্বচ্ছ চাদর বা ওড়না; যা মাথার কেশ, বক্ষস্থল ইত্যাদি আচ্ছাদিত করে তা মুসলিম রমণীর লেবাস। কেবলমাত্র শেলোয়ার কামীস বা ম্যাক্সি অথবা তার উপর বক্ষে ও গ্রীবায় থাক্ বা ভাঁজ করা ওড়নার লেবাস কাফের মহিলাদের। অনুরূপ শাড়ি যদি সর্বশরীরকে ঢেকে নেয় তবে মুসলিমদের; নচেৎ থাক্ করে বুকে চাপানো থাকলে তথা কেশদাম ও পেট-পিঠ প্রকাশ করে রাখলে---তা অমুসলিম মহিলাদের লেবাস। আর প্রিয় নবী (ﷺ) বলেন,
مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ.
‘‘যে ব্যক্তি যে জাতির অনুকরণ করবে, সে সেই জাতির দলভুক্ত।’’[7]
৭- এই পোশাক যেন জাঁকজমক ও আড়ম্বরপূর্ণ তথা প্রসিদ্ধিজনক না হয়।[8]
৮- লেবাস যেন সুগন্ধিত বা সুরভিত না হয়। পূর্বেই বলা হয়েছে যে, যে নারী সুগন্ধি ছড়িয়ে লোকালয়ে যায়, সে বেশ্যা নারী।
প্রকাশ যে, নারীদেহে যৌবনের চিহ্ন দেখা দেওয়া মাত্রই এই শর্তের পোশাক পরা ওয়াজেব।[9]
[2] (সূরা আহযাব (৩৩) : ৫৯)
[3] (সূরা আন-নূর (২৪) : ৩১)
[4] (সূরা সূরা আহযাব (৩৩) : ৫৩)
[5] (মুসলিম,বাইহাকী,মুসনাদে আহমদ,আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ১৩২৬নং)
[6] (বুখারী, মিশকাতুল মাসাবীহ ৪৪২৮-৪৪২৯নং)
[7] (আবু দাঊদ, সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৬১৪৯নং)
[8] (মুসনাদে আহমদ, আবু দাঊদ, ইবনে মাজাহ, মিশকাতুল মাসাবীহ ৪৩৪৬নং)
[9] (আদাবুয যিফাফ ১৭৭পৃঃ, আফাই ১৩-১৮পৃঃ, মাসঊলিয়াতুল মারআতিল মুসলিমাহ, আব্দুল্লাহ আল-জারুল্লাহ ৫৮-৫৯পৃঃ)
স্বামী-স্ত্রীর মাঝে কোন পর্দা নেই উভয়েই এক অপরের পোশাক।[1]
উভয়েই উভয়ের সর্বাঙ্গ দেখতে পারে। তবে সর্বদা নগ্ন পোশাকে থাকা উচিৎ নয়।[2]
মা-বেটার মাঝে পর্দা ও গোপনীয় কেবল নাভি হতে হাঁটু পর্যন্ত।
অন্যান্য নিকটাত্মীয়; যাদের সাথে চিরকালের জন্য বিবাহ হারাম তাদের সামনে পর্দা ও গোপনীয় হল গলা থেকে হাঁটু পর্যন্ত।[3]
অবশ্য কোন চরিত্রহীন এগানা পুরুষের কথায় বা ভাবভঙ্গিতে অশ্লীলতা ও কামভাব বুঝলে, মহিলা তার নিকটেও যথাসম্ভব অন্যান্য অঙ্গও পর্দা করবে।[4]
মহিলার সামনে মহিলার পর্দা নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত। মহিলা কাফের হলে তার সামনে হাত ও চেহারা ছাড়া অন্যান্য অঙ্গ খোলা বৈধ নয়। যেমন, কোন নোংরা ব্যভিচারী মেয়ের সামনেও নিজের সৌন্দর্য প্রকাশ করা উচিৎ নয়। অনুরূপ এমন কোন মহিলার সামনেও দেহসৌষ্ঠব খোলা নিষিদ্ধ; যে তার কোন বন্ধু বা স্বামীর নিকট অন্য মহিলার রূপচর্চা করে বলে জানা যায় বা আশঙ্কা হয়। এমন মহিলার সাথে মুসলিম মহিলার সখীত্ব বা বন্ধুত্বও বৈধ নয়।[5]
মা-বাপের চাচা ও মামা, মেয়ের চাচা ও মামা এবং মাহরাম। সুতরাং চাচাতো দাদো বা নানার সামনে পর্দা গলা থেকে হাঁটু পর্যন্ত।[6]
তালাকের পর ইদ্দত পার হয়ে গেলে ঐ স্বামী এই স্ত্রীর জন্য বেগানা হয়ে যায়। সুতরাং তার নিকটে পর্দা ওয়াজেব। তার ছেলে দেখতে এলে কোন অঙ্গ ঐ পুরুষকে দেখাবে না।
পালিত পুত্র থেকে পালয়িত্রী মায়ের এবং পালয়িতা বাপ থেকে পালিতা কন্যার পর্দা ওয়াজেব। প্রকাশ যে, ইসলামে এ ধরনের প্রথার কোন অনুমতি নেই।
অনুরূপ পাতানো ভাই-বোন, মা-বেটা, বাপ-বেটির মাঝে, পীর ভাই-বোন (?) বিয়াই-বিয়ান ও বন্ধুর স্বামী বা স্ত্রীর মাঝে পর্দা ওয়াজেব। যদিও তাদের চরিত্র ফিরিশ্তার মত হয়, তবুও দেখা দেওয়া হারাম। পর্দা হবে আল্লাহর ভয়ে তাঁর আনুগত্যের উদ্দেশে, মানুষের ভয়ে বা লোক প্রদর্শনের জন্য নয়। এতে মানুষের চরিত্র ও সম্মান বিচার্য নয়। সুতরাং লম্পট, নারীবাজ, পরহেযগার, মৌলবী সাহেব প্রভৃতি পর্দায় সকলেই সমান। আল্লাহর ফরয মানতে কোন প্রকারের লৌকিকতা ও সামাজিকতার খেয়াল অথবা কারো মনোরঞ্জনের খেয়াল নিশ্চয় বৈধ নয়।
দৃষ্টিহীন অন্ধ পুরুষের সামনে পর্দা নেই। অবশ্য মহিলাকে ঐ পুরুষ থেকে দৃষ্টি সংযত করতে হবে।[7]
পৃথক মহিলা শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান না থাকলে বেপর্দায় ছেলেদের সাথে পাশাপাশি বসে শিক্ষা গ্রহণ বৈধ নয়। স্বামী-সংসার উদ্দেশ্য হলে বাড়িতে বসে বিভিন্ন জ্ঞানগর্ভ বই-পুস্তক পড়া এবং দ্বীন-সংসার শিখার শিক্ষাই যথেষ্ট। অন্যান্য শিক্ষার প্রয়োজনে যথাসম্ভব পর্দার সাথে শিখতে হবে। পর্দার চেষ্টা না করে গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিলে অবশ্যই মেয়ে-অভিভাবক সকলেই পাপী হবে।[8]
চিকিৎসার প্রয়োজনে মহিলার জন্য ডাক্তার খোঁজা ওয়াজেব। লেডী ডাক্তার না পেলে অথবা যথাবিহিত চিকিৎসা তার নিকট না হলে বাধ্য হয়ে পুরুষ ডাক্তারের নিকট যেতে পারে। তবে শর্ত হল মহিলার সাথে তার স্বামী অথবা কোন মাহরাম থাকবে। একাকিনী ডাক্তার-রুমে যাবে না। পরন্তু ডাক্তারকে কেবল সেই অঙ্গ দেখাবে, যে অঙ্গ দেখানো প্রয়োজন। লজ্জাস্থান দেখলেও অন্যান্য অঙ্গ দেখানো অপ্রয়োজনে বৈধ হবে না।[9]
মহান আল্লাহ বলেন,
﴿فَاتَّقُوا اللهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ﴾
‘‘তোমরা আল্লাহকে যথাসম্ভব ভয় কর।’’ (সাধ্যমত ভয় করার চেষ্টা কর।)[10]
একাকিনী হলেও নামাযে আদবের লেবাস জরুরী। এই সময় কেবল চেহারা ও হাত খুলে রাখা যাবে। শাড়ি পরে বাহু-পেট-পিঠ-চুল বের হয়ে গেলে নামায হয় না। যেমন, সম্মুখে বেগানা পুরুষ থাকলে চেহারাও ঢাকতে হবে।[11]
সেলোয়ার-কামিস বা ম্যাক্সিতে নামায পড়লে চাদর জরুরী। কুরআন শরীফ পড়তে গিয়ে মাথা খুলে গেলে ক্ষতি নেই। এতে ওযুও নষ্ট হয় না।[12]
‘‘বৃদ্ধা নারী; যারা বিবাহের আশা রাখে না, তারা তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে যদি বহির্বাস খুলে রাখে, তাহলে তা দোষের নয়। তবে পর্দায় থাকাটাই তাদের জন্য উত্তম।’’[13] যেহেতু কানা বেগুনের ডোগলা খদ্দেরও বর্তমান।
পর্দায় থাকলে বাড়ির লোক ঠাট্টা করলে এবং কোন প্রকার অথবা সর্বপ্রকার সহায়তা না করলে মহিলার উচিৎ যথাসম্ভব নিজে নিজে পর্দা করা। এ ক্ষেত্রে হাল ছেড়ে বসা বৈধ নয়। কল-পায়খানা নেই বলে ওজর গ্রহণযোগ্য নয়। স্বামী পর্দায় থাকতে না দিলে চেষ্টার পরও যদি একান্ত নিরুপায় হয়ে বেপর্দা হতে হয়, তবুও যথাসাধ্য নিজেকে সংযত ও আবৃত করবে। আল্লাহ এ চেষ্টার অন্তর দেখবেন। যারা সহায়তা করে না বা বাধা দেয়, তাদের পাপ তাদের উপর।
পক্ষান্তরে বেগানা পুরুষ দেখে ঘর ঢুকলে বা মুখ ঢাকলে যারা হাসাহাসি করে, ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করে, কটাক্ষ হানে অথবা অসমীচীন মন্তব্য করে বা টিস্ মারে, শরয়ী পর্দা নিয়ে যারা উপহাস করে---তারা কাফের। এই পর্দানশীন মহিলারা কাল কিয়ামতে ঐ উপহাসকারীদেরকে দেখে হাসবে।[14]
সুতরাং মুমিন নারীর দুঃখ করা উচিৎ নয়, একাকিনী হলেও মন ছোট করা সমীচীন নয়। সত্যের জয় অবধারিত, আজ অথবা কাল। মরতে সকলকেই হবে, প্রতিফল সকলেই পাবে।
‘মরে না মরে না কভু সত্য যাহা, শত শতাব্দীর বিস্মৃতির তলে
নাহি মরে উপেক্ষায়, অপমানে হয় না চঞ্চল, আঘাতে না টলে।’
পর্দায় থাকার জন্য দেওর-ভরা সংসার থেকে পৃথক হয়ে আলাদা ঘর বাড়ি করার জন্য স্ত্রী যদি তার স্বামীকে তাকীদ করে, তবে তা স্বামীর মানা উচিৎ; বরং নিজে থেকেই হওয়া উচিৎ। বিশেষ করে তার ভাইরা যদি অসৎ প্রকৃতির হয়। ইসলামে এটা জরুরী নয় যে, চিরদিন ভাই-ভাই মিলে একই সংসারে থাকতে হবে। যা জরুরী তা হল, আল্লাহর দ্বীন নিজেদের জীবন ও পরিবেশে কায়েম করা, আপোষে ভ্রাতৃত্ব-বোধ ও সহায়তা-সহানুভূতি রাখা, সকলে মিলে পিতা-মাতার যথাসাধ্য সেবা করা। কিন্তু হায়রে! আল্লাহতে প্রেম ও বিদ্বেষ করতে গিয়ে মানুষের মাঝে মানুষকে দুশমন হতে হয়। হারাতে হয় একান্ত আপনকে। যেহেতু, আল্লাহর চেয়ে অধিক আপন আর কে?
পর্দা নিজের কাছে নয়। কোন ইঁদুর নিজের চোখ বন্ধ করে যদি মনে করে যে, সে সমস্ত বিড়াল থেকে নিরাপদ, তবে এ তার বোকামী নয় কি? তেঁতুল দেখে মুখে পানি আসা মানুষের এক প্রকৃতিগত দুর্দম সবভাব। অনুরূপ নারীর সৌন্দর্য দেখে বদ্খেয়াল ও কুচিন্তা আসাও মানুষের জন্য স্বাভাবিক। অতএব হাত, চোখ ও মুখের সামনে তেঁতুল থাকলে, তেঁতুলের টক গন্ধ নাকে এসে প্রবেশ করলে জিবে পানি আসাকে কেউ কি রুকতে পারবে? পর্দা না করে কি কামলোলুপতা ও ব্যভিচারের ছিদ্রপথ বন্ধ করা সম্ভব?
নারীর মোহনীয়তা, কমনীয়তা ও মনোহারিত্ব লুকিয়ে থাকে তার লজ্জাশীলতায়। নারীর লজ্জাশীলতা তার রূপ-লাবণ্য অপেক্ষা বেশী আকর্ষণীয়। প্রিয় নবী (ﷺ) বলেন,
مَا كَانَ الْفُحْشُ فِي شَيْءٍ قَطُّ إِلَّا شَانَهُ وَلَا كَانَ الْحَيَاءُ فِي شَيْءٍ قَطُّ إِلَّا زَانَهُ.
‘‘অশ্লীলতা বা নির্লজ্জতা যে বিষয়ে থাকে, সে বিষয়কে তা সৌন্দর্যহীন করে ফেলে; পক্ষান্তরে লজ্জাশীলতা যে বিষয়ে থাকে, সে বিষয়কে তা সৌন্দর্যময় ও মনোহর করে তোলে।’’[15]
সভ্য লেবাসের পর্দা থেকে বের হওয়া নারী-স্বাধীনতার যুগে পর্দা বড় বিরল। এর মূল কারণ হল লজ্জাহীনতা। কেননা, লজ্জাশীলতা নারীর ভূষণ। ভূষণ হারিয়ে নারী তার বসনও হারিয়েছে। দ্বীনী সংযম নেই নারী ও তার অভিভাবকের মনে। পরন্তু সংযমের বন্ধন একবার বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে উদ্দাম-উচ্ছৃঙ্খলতা বন্যার মত প্রবাহিত হয়। তাতে সংস্কার, শিক্ষা, চরিত্র, সবই অনায়াসে ভেসে যায়। শেষে লজ্জাও আর থাকে না। বরং এই লজ্জাহীনতাই এক নতুন ‘ফ্যাশন’ রূপে ‘সভ্য’ ও ‘আলোক প্রাপ্ত’ নামে সুপরিচিতি লাভ করে। সত্যই তো, বগল-কাটা ব্লাউজ ও ছাঁটা চুল না হলে কি সভ্য নারী হওয়া যায়? আধা বক্ষঃস্থল, ভুঁড়ির ভাঁজ ও জাং প্রভৃতি গোপন অঙ্গে দিনের আলো না পেলে কি ‘আলোক প্রাপ্তা’ হওয়া যায়?!
বলাই বাহুল্য যে, মুসলিম নারী-শিক্ষার ‘সুবেহ সাদেক’ চায়, নারী-দেহের নয়। মুসলিম নারী-বিদ্বেষী নয়, নারী-শিক্ষার দুশমনও নয়। মুসলিম বেপর্দা তথা অশ্লীলতা ও ব্যভিচারের দুশমন। শিক্ষা, প্রগতি, নৈতিকতা তথা পর্দা সবই মুসলিমের কাম্য। আর পর্দা প্রগতির পথ অবরোধ করতে চায় না; চায় বেলেল্লাপনা ও নগ্নতার পথ রুদ্ধ করতে।
পক্ষান্তরে পর্দাহীনতা; আল্লাহ ও তাঁর রসূলের অবাধ্যতা।
পর্দাহীনতা; নগ্নতা, অসভ্যতা, অশ্লীলতা, লজ্জাহীনতা, ঈর্ষাহীনতা ও ধৃষ্টতা।
পর্দাহীনতা; সাংসারিক অশান্তি, ধর্ষণ, অপহরণ, ব্যভিচার প্রভৃতির ছিদ্রপথ।
পর্দাহীনতা; যৌন উত্তেজনার সহায়ক। মানবরূপী শয়তানদের চক্ষুশীতলকারী।
পর্দাহীনতা; দুষ্কৃতীদের নয়নাভিরাম।
পর্দাহীনতা; কেবল ধর্মীয় শৃঙ্খল থেকে নারী-স্বাধীনতা নয়, বরং সভ্য পরিচ্ছদের ঘেরাটোপ থেকে নারীর সৌন্দর্য প্রকাশ ও দেহমুক্তির নামান্তর।
পর্দাহীনতা; কিয়ামতের কালিমা ও অন্ধকার।
পর্দাহীনতা; বিজাতীয় ইবলীসী ও জাহেলিয়াতি প্রথা। বরং সভ্য যুগের এই নগ্নতা দেখে জাহেলিয়াতের পর্দাহীনারাও লজ্জা পাবে।
বেপর্দার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে কোন পর্দা নেই।
[2] (ফাতাওয়াল মারআহ, ইবনে উসাইমীন, আব্দুল্লাহ বিন আল-জিবরীন ৫৪ পৃঃ, আল মারআতুল মুসলিমাহ, ওয়াহ্বী সুলাইমান আল-আলবানী ২৩৯পৃঃ)
[3] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৭৭৪)
[4] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮৫০)
[5] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮৪১)
[6] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৭৭১)
[7] (ফাতাওয়াল মারআহ ৭২পৃঃ)
[8] (ফাতাওয়াল মারআহ ৮৪পৃঃ)
[9] (ইলা রাববাতিল খুদূর ১০৫-১০৬পৃঃ)
[10] (সূরা আত্-তাগাবুন (৬৪) : ১৬)
[11] (কিতাবুদ দাওয়াহ, ইবনে বায২/৯৪)
[12] (ফাতাওয়াল মারআহ ৩৭, মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ১৫/২৮৪)
[13] (আল কুরআন কারীম ২৪/৬০)
[14] (আর-রাসাইলু অল ফাতাওয়ান নিসায়্যিাহ, ইবনে বায ৬০পৃঃ, ফাতাওয়াল মারআহ ৭৬পৃঃ)
[15] (সহীহ তিরমিযী ১৬০৭নং, ইবনে মাজাহ)
নারীর রূপমাধুরী ও সৌন্দর্যলাবণ্য নারীর গর্ব। তার এ রূপ-যৌবন সৃষ্টি হয়েছে একমাত্র কেবল তার স্বামীর জন্য। স্বামীকে সে রূপ উপহার না দিতে পারলে কোন মূল্যই থাকে না নারীর। এই রূপ-যৌবন স্বামীকে উপহার দিয়ে কত যে আনন্দ, সে তো নারীরাই জানে। সুন্দর অঙ্গের উপর অঙ্গরাগ দিয়ে আরো মনোহারী ও লোভনীয় করে স্বামীকে উপহার দিয়ে উভয়েই পরমানন্দ ও প্রকৃত দাম্পত্য-সুখ লুটতে পারে পার্থিব সংসারে।
সুতরাং অঙ্গ যার জন্য নিবেদিত অঙ্গরাগও তার জন্যই নির্দিষ্ট। স্বামী ব্যতীত অন্য কারো জন্য অঙ্গসজ্জা করা ও তা প্রদর্শন করা বৈধ নয়।
যুগের তালে তালে নারীদের অঙ্গরাগ, মেকআপ ও প্রসাধন-সামগ্রী অতিশয় বেড়ে উঠেছে। যার হালাল ও হারাম হওয়ার কষ্টিপাথর হল এই যে, ঐ প্রসাধনদ্রব্য ব্যবহারে যেন অঙ্গের বা ত্বকের কোন ক্ষতি না হয়। ঐ দ্রব্যে যেন কোন প্রকার অবৈধ বা অপবিত্র বস্ত্ত মিশ্রিত না থাকে, তা যেন বিজাতীয় মহিলাদের বৈশিষ্ট্য না হয়। (যেমন সিন্দুর, টিপ প্রভৃতি) এবং তা যেন বেগানার সামনে প্রকাশ না পায়।[1]
সুতরাং শরীয়তের সীমার মাঝে থেকে নারী যে কোন প্রসাধন কেবল স্বামীর মন আকর্ষণের জন্য ব্যবহার করতে পারে। পরিধান করতে পারে যে কোন পোশাক তার সামনে, কেবল তাকেই ভালো লাগানোর জন্য। এই সাজ-সজ্জাতেও লুকিয়ে থাকে ভালোবাসার রহস্য। পক্ষান্তরে স্ত্রী যদি স্বামীর জন্য অঙ্গসজ্জা না করে; পরন্তু বাইরে গেলে বা আর কারো জন্য প্রসাধন করে, তবে নিশ্চয়ই সে নারী প্রেম-প্রকৃতির বিরোধী। নচেৎ সে স্বামীর প্রেম ও দৃষ্টি আকর্ষণকে জরুরী ভাবে না। - এমন নারী হতভাগী বৈ কি? সে জানে না যে, তার নিজের দোষে স্বামী অন্যাসক্ত হয়ে পড়বে।
টাইট্ফিট চুশ্ত পোশাক কেবল স্বামীর দৃষ্টি আকর্ষণের উদ্দেশ্যে বাড়ির ভিতর পরিধান বৈধ। অবশ্য কোন এগানা ও মহিলার সামনে, এমন কি পিতা-মাতা বা ছেলে-মেয়েদের সামনেও ব্যবহার উচিৎ নয়।[2]
কেবল স্বামীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ব্রা ব্যবহার বৈধ। অন্যের জন্য ধোঁকার উদ্দেশ্যে তা অবৈধ।[3]
যে পোশাকে অথবা অলঙ্কারে কোন প্রকারের মানুষ বা জীব-জন্তুর ছবি অঙ্কিত থাকে তা ব্যবহার করা বৈধ নয়। যেহেতু ইসলাম ছবি ও মূর্তির ঘোর বিরোধী।[4]
যে লেবাস বা অলঙ্কারে ক্রুশ, শঙ্খ, সর্প বা অন্যান্য কোন বিজাতীয় ধর্মীয় প্রতীক চিত্রিত থাকে, মুসলিমের জন্য তাও ব্যবহার করা বৈধ নয়।[5]
নিউ মডেল বা ফ্যাশনের পরিচ্ছদ ব্যবহার তখনই বৈধ, যখন তা পর্দার কাজ দেবে এবং তাতে কোন হিরো-হিরোইন বা কাফেরদের অনুকরণ হবে না।[6]
স্ক্যার্ট-ব্লাউজ বা স্ক্যার্ট-গেঞ্জি মুসলিম মহিলার ড্রেস নয়। বাড়িতে এগানার সামনে সেই ড্রেস পরা উচিৎ; যাতে গলা থেকে পায়ের গাঁট পর্যন্ত পর্দায় থাকে। আর (বিনা বোরকায়) বেগানার সামনে ও বাইরে গেলে তো নিঃসন্দেহে তা পরা হারাম।[7]
প্যান্ট-শার্ট মুসলিমদের ড্রেস নয়। কিছু শর্তের সাথে পরা বৈধ হলেও মহিলারা তা ব্যবহার করতে পারে না; যদিও তা ঢিলেঢালা হয় এবং টাইটফিট না হয়। এই জন্য যে, তা হল পুরুষদের ড্রেস। আর পুরুষের বেশধারিণী নারী অভিশপ্তা।[8]
কেশবিন্যাসে মহিলার সিঁথি হবে মাথার মাঝে। এই অভ্যাসের বিরোধিতা করে সে মাথার এক পাশে সিঁথি করতে পারে না।[9] সাধারণতঃ এ ফ্যাশন দ্বীনদার মহিলাদের নয়।
বেণী বা চুঁটি গেঁথে মাথা বাঁধাই উত্তম। খোঁপা বা লোটন মাথার উপরে বাঁধা অবৈধ। পিছন দিকে ঘাড়ের উপর যদি কাপড়ের উপর তার উচ্চতা ও আকার নজরে আসে তবে তাও বৈধ নয়। মহিলার চুল বেশী বা লম্বা আছে--এ কথা যেন পরপুরুষে আন্দাজ না করতে পারে। যেহেতু নারীর সুকেশ এক সৌন্দর্য; যা কোন প্রকারে বেগানার সামনে প্রকাশ করা হারাম।[10]
প্রিয় নবী (ﷺ) বলেন,
سَيَكُونُ فِي آخِرِ أُمَّتِي رِجَالٌ يَرْكَبُونَ عَلَى السُّرُوجِ كَأَشْبَاهِ الرِّجَالِ يَنْزِلُونَ عَلَى أَبْوَابِ الْمَسْجِدِ نِسَاؤُهُمْ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ عَلَى رُءُوسِهِمْ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْعِجَافِ الْعَنُوهُنَّ فَإِنَّهُنَّ مَلْعُونَاتٌ.
‘‘আমার শেষ যামানার উম্মতের মধ্যে কিছু এমন লোক হবে যারা ঘরের মত জিন্ (মোটর গাড়ি)তে সওয়ার হয়ে মসজিদের দরজায় দরজায় নামবে। (গাড়ি করে নামায পড়তে আসবে।) আর তাদের মহিলারা হবে অর্ধনগ্ন; যাদের মাথা কৃশ উঁটের কুঁজের মত (খোঁপা) হবে। তোমরা তাদেরকে অভিশাপ করো। কারণ, তারা অভিশপ্তা!’’[11]
এ ভবিষ্যৎবাণী যে কত সত্য---তা বলার অপেক্ষা রাখে না!
মাথার ঝরে-পরা-কেশ মাটিতে পুঁতে ফেলা উত্তম। যেহেতু বিশেষ করে মহিলার চুল উল্লেখযোগ্য দীর্ঘ হলে তা যুবকদের মন কাড়ে। পরন্তু ঐ চুল নিয়ে যাদুও করা যায়। তাই যেখানে-সেখানে না ফেলাই উচিৎ।[12]
মহিলার চুল ও কেশদাম অমূল্য সম্পদ, তা বিক্রয় করা বৈধ নয়।
মহিলারা চুলে খেযাব বা কলপ ব্যবহার করতে পারে। তবে কালো রঙের কলপ ব্যবহার হারাম। বাদামী, সোনালী, লালচে প্রভৃতি কলপ দিয়ে রঙাতে পারে। তবে তাতে যেন কোন হিরোইন বা কাফের নারীর অনুকরণ বা বেশধারণ উদ্দেশ্য না হয়।[13]
সৌন্দর্যের জন্য সামনের কিছু চুল ছাঁটা অবৈধ নয়। তবে কোন হিরোইন বা কাফের মহিলাদের অনুকরণ করে তাদের মত অথবা পুরুষদের মত করে ছেঁটে ‘সাধনা-কাট’, বা ‘হিপ্পি-কাট’ ইত্যাদি হারাম।[14]
তাছাড়া সুদীর্ঘ কেশদাম সুকেশিনীর এক মনোলোভা সৌন্দর্য, যা ছেঁটে নষ্ট না করাই উত্তম।[15]
স্বামীর দৃষ্টি আকর্ষণের উদ্দেশ্যে---অর্থের অপচয় না হলে---মেশিন দ্বারা চুল কুঁচকানো বা থাক্থাক্ করা বৈধ।[16] তবে তা কোন পুরুষ সেলুনে অবশ্যই নয়। মহিলা সেলুনে মহিলার নিকট এসব বৈধ। তবে গুপ্তাঙ্গের লোম আদি (বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে) পরিষ্কার করতে কোন মহিলার কাছেও লজ্জাস্থান খোলা বৈধ নয়।[17]
কৃত্রিম চুল বা পরচুলা (টেসেল) আদি কেশ বেশী দেখাবার উদ্দেশ্যে ব্যবহার হারাম, স্বামী চাইলেও তা মাথায় লাগানো যাবে না। প্রিয় নবী (ﷺ) বলেন,
أَيُّمَا امْرَأَةٍ زَادَتْ فِي رَأْسِهَا شَعْرًا لَيْسَ مِنْهُ، فَإِنَّهُ زُورٌ.
‘‘যে নারী তার মাথায় এমন চুল বাড়তি লাগায় যা তার মাথার নয়, সে তার মাথায় জালিয়াতি সংযোগ করে।’’[18]
যে মেয়েরা মাথায় পরচুলা লাগিয়ে বড় খোঁপা প্রদর্শন করে আল্লাহ রসূল (ﷺ) তাদের উপর অভিসম্পাত করেছেন।[19]
অবশ্য কোন মহিলার মাথায় যদি আদৌ চুল না থাকে, তবে ঐ ত্রুটি ঢাকার জন্য তার পক্ষে পরচুলা ব্যবহার বৈধ।[20]
ভ্রূ চেঁছে সরু চাঁদের মত করে সৌন্দর্য আনয়ন বৈধ নয়। স্বামী চাইলেও নয়। যেহেতু ভ্রূ ছেঁড়া বা চাঁছাতে আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন করা হয়; যাতে তাঁর অনুমতি নেই। তাছাড়া নবী (ﷺ) এমন মেয়েদেরকেও অভিশাপ করেছেন।[21] অনুরূপ কপাল চেঁছেও সৌন্দর্য আনা অবৈধ।[22]
মহিলার গালে বা ওষ্ঠের উপরে পুরুষের দাড়ি-মোচের মত দু-একটা বা ততোধিক লোম থাকলে তা তুলে ফেলায় দোষ নেই। কারণ, বিকৃত অঙ্গে স্বাভাবিক আকৃতি ও শ্রী ফিরিয়ে আনতে শরীয়তের অনুমতি আছে।[23]
নাক ফুড়িয়ে তাতে কোন অলঙ্কার ব্যবহার বৈধ।[24]
দেগে মুখে-হাতে নক্সা করা বৈধ নয়। এরূপ দেগে নক্সা যে বানিয়ে দেয় এবং যার জন্য বানানো হয় উভয়কেই নবী (ﷺ) অভিসম্পাত করেছেন।[25]
স্বামীর দৃষ্টি ও মন আকর্ষণের জন্য ঠোঁট-পালিশ, গাল-পালিশ প্রভৃতি অঙ্গরাগ ব্যবহার বৈধ; যদি তাতে কোন প্রকার হারাম বা ক্ষতিকর পদার্থ মিশ্রিত না থাকে।[26]
দাঁত ঘষে ফাঁক-ফাঁক করে চিরনদাঁতীর রূপ আনা বৈধ নয়। এমন নারীও নবী (ﷺ) এর মুখে অভিশপ্ত।[27]
অবশ্য কোন দাঁত অস্বাভাবিক ও অশোভনীয় রূপে বাঁকা বা অতিরিক্ত (কুকুরদাঁত) থাকলে তা সিধা করা বা তুলে ফেলা বৈধ।[28]
নখ কেটে ফেলা মানুষের এক প্রকৃতিগত রীতি। প্রতি সপ্তাহে একবার না পারলেও ৪০ দিনের ভিতর কেটে ফেলতে হয়।[29] কিন্তু এই প্রকৃতির বিপরীত করে কতক মহিলা নখ লম্বা করায় সৌন্দর্য আছে মনে করে। নিছক পাশ্চাত্যের মহিলাদের অনুকরণে অসভ্য লম্বা ধারালো নখে নখ-পালিশ লাগিয়ে বন্য সুন্দরী সাজে। কিন্তু ‘‘যে ব্যক্তি যে জাতির অনুকরণ করে, সে সেই জাতির দলভুক্ত।’’[30]
নখে নখপালিশ ব্যবহার অবৈধ নয়, তবে ওযুর পূর্বে তুলে ফেলতে হবে। নচেৎ ওযু হবে না।[31] অবশ্য এর জন্য উত্তম সময় হল মাসিকের কয়েক দিন। তবে গোসলের পূর্বে অবশ্যই তুলে ফেলতে হবে।
মহিলাদের চুলে, হাতে ও পায়ে মেহেন্দী ব্যবহার মাসিকাবস্থাতেও বৈধ। বরং মহিলাদের নখ সর্বদা মেহেন্দী দ্বারা রঙ্গিয়ে রাখাই উত্তম।[32] এতে এবং অনুরূপ আলতাতে পানি আটকায় না। সুতরাং না তুলে ওযু-গোসল হয়ে যাবে।[33]
রঙ ব্যবহার পুরুষদের জন্য বৈধ নয়। অবশ্য চুল-দাড়িতে কলপ লাগাতে পারে; তবে কালো রং নয়।
পায়ে নুপুর পরা বৈধ; যদি তাতে বাজনা না থাকে। বাজনা থাকলে বাইরে যাওয়া অথবা বেগানার সামনে শব্দ করে চলা হারাম। কেবল স্বামী বা এগানার সামনে বাজনাদার নুপুর বা তোড়া আদি ব্যবহার দোষের নয়।[34]
অতিরিক্ত উঁচু সরু হিল-তোলা জুতা ব্যবহার বৈধ নয়। কারণ এতে নারীর চলনে এমন ভঙ্গি সৃষ্টি হয়, যা দৃষ্টি-আকর্ষী; যাতে পুরুষ প্রলুব্ধ হয়। তাছাড়া এতে আছাড় খেয়ে বিপদগ্রস্ত বা লাঞ্ছিতা হওয়ার আশঙ্কাও থাকে।[35]
স্বামীর জন্য নিজেকে সর্বদা সুরভিতা করে রাখায় নারীত্বের এক আনন্দ আছে। ভালোবাসায় যাতে ঘুণ না ধরে; বরং তা যাতে গাঢ় থেকে গাঢ়তর হয় সে চেষ্টা স্বামী-স্ত্রীর উভয়কেই রাখা উচিৎ। তবে মহিলা কোন সেন্ট্ বা সেন্ট্জাতীয় প্রসাধন ব্যবহার ক’রে বাইরে বেগানার সামনে যেতে পারে না। কারণ, তার নিকট থেকে সেন্ট্ যেমন স্বামীর মন ও ধ্যান আকর্ষণ ক’রে সুপ্ত যৌনবাসনা জাগ্রত করে, কামানল প্রজ্বালিত করে ঠিক তেমনিই পরপুরুষের মন, ধ্যান, যৌবন প্রভৃতি আকৃষ্ট হয়। তাই তো যারা সেন্ট্ ব্যবহার করে বাইরে বেগানা পুরুষের সামনে যায় তাদেরকে শরীয়তে ‘বেশ্যা’ বলা হয়েছে।[36]
এখানে খেয়াল রাখার বিষয় যে, সেন্টে যেন কোহল বা স্পিরিট মিশ্রিত না থাকে; থাকলে তা ব্যবহার (অনেকের নিকট) বৈধ নয়।[37]
কোন বিকৃত অঙ্গে সৌন্দর্য আনয়নের জন্য অপারেশন বৈধ। কিন্তু ত্রুটিহীন অঙ্গে অধিক সৌন্দর্য আনয়নের উদ্দেশ্যে অস্ত্রোপচার করা বৈধ নয়।[38] পক্ষান্তরে অতিরিক্ত আঙ্গুল বা গোশত হাতে বা দেহের কোন অঙ্গে লটকে থাকলে তা কেটে ফেলা বৈধ।[39]
কোন আঙ্গিক ত্রুটি ঢাকার জন্য কৃত্রিম অঙ্গ ব্যবহার দূষণীয় নয়। যেমন, সোনার বাঁধানো নাক, দাঁত ইত্যাদি ব্যবহার করা যায়।[40]
সতর্কতার বিষয় যে, অলঙ্কার ও পোশাক-পরিচ্ছদ নিয়ে মহিলামহলে মহিলাদের আপোসে গর্ব করা এবং দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ক্ষণে ক্ষণে ‘ড্রেস চেঞ্জ্’ করা বা অলঙ্কার বদলে পরা বা ডবল সায়া ইত্যাদি পরা ভালো মেয়ের লক্ষণ নয়। গর্ব এমন এক কর্ম যাতে মানুষ লোকচক্ষে খর্ব হয়ে যায়। প্রিয় নবী (ﷺ) বলেন,
كُلُوا وَاشْرَبُوا وَالْبَسُوا وَتَصَدَّقُوا فِي غَيْرِ إِسْرَافٍ وَلَا مَخِيلَةٍ.
ªতোমরা খাও, পান কর, পরিধান কর, দান কর, তবে যেন দু’টি জিনিস না থাকে; অপচয় ও গর্ব।«
আর ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন,
كُلْ مَا شِئْتَ وَالْبَسْ مَا شِئْتَ مَا أَخْطَأَتْكَ اثْنَتَانِ سَرَفٌ أَوْ مَخِيلَةٌ.
‘‘যা ইচ্ছা খাও-পর, তবে যেন দু’টি জিনিস না থাকে; অপচয় ও গর্ব।’’[41]
আল্লাহ তাআলা সুন্দর। তিনি সৌন্দর্য ও পরিচ্ছন্নতা পছন্দ করেন। কিন্তু এতে সময় ও অর্থের অপচয় করা বৈধ নয়। কারণ, তিনি অপব্যয়কারীকে পছন্দ করেন না। পরন্তু অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই-বোন।
পক্ষান্তরে, ফুলের সৌরভ ও রূপের গৌরব থাকেও না বেশী দিন।
‘সৌন্দর্য-গর্বিতা ওগো রানী!
তোমার এ কমনীয় রম্য দেহখানি,
এই তব যৌবনের আনন্দ বাহার
জান কি গো, নহে তা তোমার?’
এক বৃদ্ধার মুখমন্ডলে ঔজ্জ্বল্য দেখে একজন মহিলা তাকে প্রশ্ন করল, তোমার চেহারায় এ বৃদ্ধ বয়সেও লাবণ্য ফুটছে, রূপ যেন এখনো যুবতীর মতই আছে। তুমি কোন্ ক্রিম ব্যবহার কর গো?
বৃদ্ধা সহাস্যে বলল, দুই ঠোঁটে ব্যবহার করি সত্যবাদিতার লিপষ্টিক, চোখে ব্যবহার করি (হারাম থেকে) অবনত দৃষ্টির কাজল, মুখমন্ডলে ব্যবহার করি পর্দার ক্রিম ও গোপনীয়তার পাওডার, হাতে ব্যবহার করি পরোপকারিতার ভেজলীন, দেহে ব্যবহার করি ইবাদতের তেল, অন্তরে ব্যবহার করি আল্লাহর প্রেম, মস্তিষ্কে ব্যবহার করি প্রজ্ঞা, আত্মায় ব্যবহার করি আনুগত্য এবং প্রবৃত্তির জন্য ব্যবহার করি ঈমান।
সত্যই কি অমূল্য ক্রিমই না ব্যবহার করে বৃদ্ধা। তাই তো তার চেহারায় ঈমানী লাবণ্য ও জ্যোতি।
[2] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮২৫)
[3] (ফাতাওয়াল মারআতিল মুসলিমাহ, সঞ্চয়নে আশরাফ আব্দুল মাকসূদ ১/৪৭০)
[4] (আল-ফাতাওয়া আল-ইজতিমাইয়্যাহ, ইবনে বায, ইবনে উসাইমীন ৪০পৃঃ)
[5] (আল-ফাতাওয়াল মুহিম্মাহ, লিনিসাইল উম্মাহ। ইবনে বায, ইবনে উসাইমীন ৭পৃঃ)
[6] (আল-ফাতাওয়াল মুহিম্মাহ, লিনিসাইল উম্মাহ ১২পৃঃ)
[7] (আল-ফাতাওয়াল মুহিম্মাহ, লিনিসাইল উম্মাহ ২১পৃঃ)
[8] (আল-ফাতাওয়াল মুহিম্মাহ, লিনিসাইল উম্মাহ ৩০-৩১পৃঃ)
[9] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮২৭)
[10] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮৩০, ফাতাওয়াল মারআহ ৯৪পৃঃ)
[11] (মুসনাদ আহমাদ ২/২২৩, ইবনে হিববান, সহীহ, ত্বাবারানী, আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ২৬৮৩নং)
[12] (ফাতাওয়াল মারআহ ৯৯পৃঃ)
[13] (আল-ফাতাওয়াল মুহিম্মাহ, লিনিসাইল উম্মাহ ২৫পৃঃ,তামবীহাতুল মু’মিনাত ৩০পৃঃ)
[14] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮২৬-৮৩১, ফাতাওয়াল মারআহ ১০৭-১১১পৃঃ)
[15] (ফাতাওয়াল মারআতিল মুসলিমাহ ২/৫১২-৫১৫)
[16] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮২৯)
[17] (আল-ফাতাওয়াল মুহিম্মাহ, লিনিসাইল উম্মাহ ১৩পৃঃ, ইলা রাববাতিল খুদূর ১০৩পৃঃ)
[18] (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ২৭০৫নং)
[19] (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৫১০৪নং, ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮২৯)
[20] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮৩৬, ফাতাওয়াল মারআহ ৮৩পৃঃ)
[21] (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৫১০৪নং, ফাতাওয়াল মারআহ ৭২,৯৪পৃঃ)
[22] (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ৬/৬৯২)
[23] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮৩২, ফাতাওয়াল মারআহ ৯৪পৃঃ)
[24] (ফাতাওয়াল মারআহ ৮২পৃঃ)
[25] (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৫১০৪নং, তামবীহাতুল মু’মিনাত ২৯পৃঃ)
[26] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮২৯)
[27] (সহীহুল জামে ৫১০৪নং, আদাবুয যিফাফ ২০৩পৃঃ)
[28] (তামবীহাতুল মু’মিনাত ২৮পৃঃ, ফাতাওয়াল মারআহ ৯৪পৃঃ)
[29] (মুসলিম, আবু দাঊদ, নাসাঈ, তিরমিযী, আদাবুয যিফাফ ২০৬পৃঃ)
[30] (আবূ দাউদ, মুসনাদে আহমদ, আদাবুয যিফাফ ২০৫পৃঃ)
[31] (ইলা রাববাতিল খুদূর ১০১পৃঃ)
[32] (আবু দাঊদ, মিশকাতুল মাসাবীহ ৪৪৬৭নং)
[33] (ফাতাওয়াল মারআহ ২৬পৃঃ)
[34] (ফাতাওয়াল মারআহ ৮০পৃঃ)
[35] (ইলা রাববাতিল খুদূর ৮৬পৃঃ)
[36] (মিশকাতুল মাসাবীহ ১০৬৫নং)
[37] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ২০/১৮৫, আল-ফাতাওয়া আল- ইসলামিয়্যাহ ১/২০৩)
[38] (ফাতাওয়াল মারআহ ৯২পৃঃ)
[39] (যীনাতুল মারআতিল মুসলিমাহ, ড. ফাতিমা সিদ্দীক নুজূমঃ ১২২ পৃঃ)
[40] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮৩৩)
[41] (বুখারী)
মানুষ প্রকৃতিগতভাবে সমাজবদ্ধ হয়ে বাস করতে অভ্যস্ত। একাকী বাস তার সবভাব-সিদ্ধ নয়। তাই প্রয়োজন পড়ে সঙ্গিনীর ও কিছু সাথীর; যারা হবে একান্ত আপন। বিবাহ মানুষকে এমন সাথী দান করে।
মানুষ সংসারে সবয়ংসম্পূর্ণ নয়। বিবাহ মানুষকে দান করে বহু আত্মীয়-সবজন, বহু সহায় ও সহচর।
মানুষের প্রকৃতিতে যে যৌন-ক্ষুধা আছে, তা দূর করার বৈধ ও সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা হল বিবাহ।
বিবাহ মানুষকে সুন্দর চরিত্র দান করে, অবৈধ দৃষ্টি থেকে চক্ষুকে সংযত রাখে, লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করে।
বিবাহের মাধ্যমে আবির্ভাব হয় মুসলিম প্রজন্মের। এতে হয় বংশ বৃদ্ধি, রসূল (ﷺ) এর উম্মত বৃদ্ধি।
পৃথিবী আবাদ রাখার সঠিক ও সুশৃঙ্খল বৈধ ব্যবস্থা বিবাহ। বিবাহ আনে মনে শান্তি, হৃদয়ে স্থিরতা, চরিত্রে পবিত্রতা, জীবনে পরম সুখ। বংশে আনে আভিজাত্য, অনাবিলতা। নারী-পুরুষকে করে চিরপ্রেমে আবদ্ধ। দান করে এমন সুখময় দাম্পত্য, যাতে থাকে ত্যাগ ও তিতিক্ষা, শ্রদ্ধা, প্রেম, স্নেহ ও উৎসর্গ।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجاً لِتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَوَدَّةً وَرَحْمَةً إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآياتٍ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ﴾
অর্থাৎ, তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে আর একটি নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের মধ্য হতেই তোমাদের সঙ্গিনীদেরকে সৃষ্টি করেছেন; যাতে তোমরা ওদের নিকট শান্তি পাও এবং তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও স্নেহ সৃষ্টি করেছেন। চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে।[1]
ইসলামে বৈরাগ্যের কোন স্থান নেই।
‘‘বৈরাগ্য সাধনে মুক্তি সে আমার নয়,
অসংখ্য বন্ধন মাঝে মহানন্দময়
লভিব মুক্তির স্বাদ----।’’
এই হল মুসলিমের জীবন। তাই তো বিবাহ করা প্রত্যেক নবীর সুন্নত ও তরীকা। বিবাহ করা এক ইবাদত। স্ত্রী-সঙ্গম করা সদকাহ্তুল্য।[2] যেহেতু এই পরিণয়ে মুসলিমের বিশেষ উদ্দেশ্য থাকে নিজেকে ব্যভিচার থেকে রক্ষা করা, স্ত্রীর অধিকার আদায় করা এবং তাকেও ব্যভিচারের হাত হতে রক্ষা করা, নেক সন্তান আশা করা, অবৈধ দৃষ্টি, চিন্তা প্রভৃতি থেকে নিজেকে দূরে রাখা। প্রিয় নবী (ﷺ) বলেন,
إذَا تَزَوَّجَ العَبدُ فَقَد استَكمَلَ نِصْفَ الدِّين فَلْيَتَّقِ اللهَ في النِّصف البَاقي.
‘‘(মুসলিম) বান্দা যখন বিবাহ করে, তখন সে তার অর্ধেক ঈমান (দ্বীন) পূর্ণ করে, অতএব বাকী অর্ধেকাংশে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে।’’[3]
ব্যভিচার থেকে বাঁচার জন্য ও পবিত্র জীবন গঠনের উদ্দেশ্যে বিবাহ করলে দাম্পত্যে আল্লাহর সাহায্য আসে।[4]
আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿وَأَنْكِحُوا الأَيَامَى مِنْكُمْ وَالصَّالِحِينَ مِنْ عِبَادِكُمْ وَإِمَائِكُمْ إِنْ يَكُونُوا فُقَرَاءَ يُغْنِهِمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهِ وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ﴾
‘‘তোমাদের মধ্যে যারা অবিবাহিত তাদের বিবাহ সম্পাদন কর এবং তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরও। তারা অভাবগ্রস্ত হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ তো প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।[5]
জগদ্গুরু মুহাম্মাদ (ﷺ) বলেন,
يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنْ اسْتَطَاعَ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ.
‘‘হে যুবকদল! তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি (বিবাহের অর্থাৎ স্ত্রীর ভরণপোষণ ও রতিক্রিয়ার) সামর্থ্য রাখে সে যেন বিবাহ করে। কারণ, বিবাহ চক্ষুকে দস্ত্তরমত সংযত করে এবং লজ্জাস্থান হিফাযত করে। আর যে ব্যক্তি ঐ সামর্থ্য রাখে না, সে যেন রোযা রাখে। কারণ, তা যৌনেন্দ্রিয় দমনকারী।’’[6]
তিনি আরো বলেন,
النِّكَاحُ من سُنَّتي . فَمَن لَم يَعمَل بسُنَّتي فَلَيسَ مني.
‘‘বিবাহ করা আমার সুন্নত (তরীকা)। সুতরাং যে ব্যক্তি আমার সুন্নত (তরীকা) অনুযায়ী আমল করে না, সে আমার দলভুক্ত নয়।’’[7]
সুতরাং বিয়ের বয়স হলে, যৌন-পিপাসায় অতিষ্ঠ হলে এবং নিজের উপর ব্যভিচারের অথবা গুপ্ত অভ্যাসে স্বাস্থ্য ভাঙ্গার আশঙ্কা হলে বিলম্ব না করে যুবকের বিবাহ করা ওয়াজেব। বাড়ির লোকের উচিৎ, এতে তাকে সহায়তা করা এবং ‘ছোট’ বা ‘পড়ছে’ বলে বিবাহে বাধা না দেওয়া। যেমন পূর্বে আরো অবিবাহিত ভাই বা বোন থাকলে এবং তাদের বিয়ের ব্যবস্থা বা ইচ্ছা না হলে এই যুবককে বিবাহে বাধা দেওয়ার অধিকার পিতা-মাতার বা আর কারো নেই। আল্লাহর আনুগত্যে গুরুজনের আনুগত্য ওয়াজেব। যেখানে আল্লাহর অবাধ্যতার ভয় ও আশঙ্কা হবে, সেখানে আর কারো আনুগত্য নেই। বরং এই সব ক্ষেত্রে বিশেষ করে ‘মনমত পণ’ না পাওয়ার জন্য বিয়ে না দিলে মা-বাপের আনুগত্য হারাম। সুতরাং যুবকের উচিৎ, যথাসময়ে বিনা পণে মা-বাপ রাজী না হলেও রাজী করতে চেষ্টা করে বিবাহ করা। নচেৎ তার অভিভাবক আল্লাহ।
অনেক সময় দ্বীনদার-পরহেজগার পরিবেশের পুণ্যময়ী সুশীলা তরুণীর সাথে বিবাহে মা-বাপ নিজস্ব কোন স্বার্থে রাজী হয় না। অথবা এমন পাত্রী দিতে চায়; যে দ্বীনদার নয়। দ্বীনদার যুবকের এ ক্ষেত্রেও মা-বাপের কথা না মানা দ্বীনদারী।[8]
বৈবাহিক জীবন দু-একদিনের সফর নয়; যাতে দু-একদিন পর সহজভাবে সঙ্গী পরিবর্তন করা যাবে। সুতরাং এখানে ছেলে-মেয়ে সকলেরই বুঝাপড়া ও পছন্দের অধিকার আছে।
পক্ষান্তরে দ্বীন ছাড়া অন্য স্বার্থে ছেলে যদি মা-বাপের কথা না মেনে তাদেরকে নারাজ করে বিবাহ করে, তবে এমন ছেলে নিশ্চয়ই অবাধ্য। অবাধ্য মাতা-পিতার এবং অবাধ্য আল্লাহ ও তাঁর রসূলের। এ বিষয়ে আরো কিছু আলোচনা আসবে ‘বিবাহ প্রস্তাব ও তার শর্তাবলী’তে।
[2] (মুসলিম ১০০৬নং)
[3] (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৬১৪৮নং)
[4] (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৩০৫০নং, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩০৮৯নং)
[5] (সূরা আন-নূর (২৪) : ৩২)
[6] (বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩০৮০নং)
[7] (ইবনে মাজাহ ১৮৪৬নং)
[8] (আল-লিকাউশ শাহরী ৩/৪২পৃঃ, ফাতাওয়াল মারআহ ৫৬পৃঃ)
বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে নারী-পুরুষ বৈধভাবে যৌনসুখ উপভোগ করতে পারে। কিন্তু কোন্ পুরুষ নারীর জন্য বৈধ এবং কোন্ নারী পুরুষের জন্য অবৈধ বা অগম্যা তার বিস্তারিত বিধান রয়েছে ইসলামে।[1]
অবৈধ নারীকে অথবা অবৈধ নিয়মে বিবাহ করে সংসার করলে ব্যভিচার করা হয়।
এমন কতকগুলি কারণ রয়েছে যার কারণে নারী-পুরুষের আপোসে কোন সময়ে বিবাহ বৈধ নয়।
প্রথম কারণ, রক্তের সম্পর্কঃ
নারী-পুরুষের মাঝে রক্তের সম্পর্ক থাকলে যেহেতু এক অপরের অংশ গণ্য হয় তাই তাদের আপোসে বিবাহ হারাম। এরা হল;
১- পুরুষের পক্ষে; তার মা, দাদী, নানী এবং নারীর পক্ষে; তার বাপ, দাদো ও নানা।
২- পুরুষের পক্ষে; তার কন্যা (বেটী) এবং নাতিন ও পুতিন, আর নারীর পক্ষে; তার পুত্র (ছেলে) এবং নাতি ও পোতা।
৩- পুরুষের পক্ষে; তার (সহোদরা, বৈপিত্রেয়ী ও বৈমাত্রেয়ী) বোন, বুনঝি, ভাইঝি ও তাদের মেয়ে, ভাইপো ও বুনপোর মেয়ে। আর নারীর পক্ষে; তার (সহোদর, বৈপিত্রেয় বা বৈমাত্রেয়) ভাই, ভাইপো, বুনপো ও তাদের ছেলে এবং ভাইঝি ও বুনঝির ছেলে।
৪- পুরুষের পক্ষে; তার ফুফু (বাপের সহোদরা, বৈপিত্রেয়ী বা বৈমাত্রেয়ী বোন) এবং নারীর পক্ষে; তার চাচা (বাপের সহোদর, বৈপিত্রেয় বা বৈমাত্রেয় ভাই)।
৫- পুরুষের পক্ষে; তার খালা (মায়ের সহোদরা, বৈপিত্রেয়ী বা বৈমাত্রেয়ী বোন) এবং নারীর পক্ষে; তার মামা (মায়ের সহোদর, বৈপিত্রেয় বা বৈমাত্রেয় ভাই)।
প্রকাশ যে, সৎ মায়ের বোন (সৎ খালা) পুরুষের জন্য এবং সৎ মায়ের ভাই (সৎ মামা) নারীর জন্য হারাম বা মাহরাম নয়। এদের আপোসে বিবাহ বৈধ।
৬- পুরুষের পক্ষে; তার বাপ-মায়ের খালা বা ফুফু এবং নারীর পক্ষে তার বাপ-মায়ের চাচা বা মামা অবৈধ।[2]
প্রকাশ যে, পুরুষের জন্য তার খালাতো, ফুফাতো, মামাতো, চাচাতো বোন ও (তাদের মেয়ে) বুনঝি বৈধ ও গম্য। অনুরূপ নারীর জন্য তার খালাতো, ফুফাতো, মামাতো, চাচাতো ভাই ও ভাইপো বৈধ ও গম্য।
আবার পুরুষের পক্ষে; তার (মামার মৃত্যু বা তালাকের পর) মামী, (চাচার মৃত্যু বা তালাকের পর) চাচী এবং নারীর পক্ষে তার (খালার মৃত্যু বা তালাকের পর) খালু (ফুফুর মৃত্যু বা তালাকের পর) ফোফা গম্য। পূর্বোক্ত গম্য-গম্যার মাঝে বিবাহ বৈধ ও পর্দা ওয়াজেব।
রক্তের সম্পর্ক যদি কৃত্রিম হয়, তবে বিবাহ হারাম নয়। সুতরাং (রোগিনীকে রক্ত দিয়ে বাঁচিয়ে তাকে বিবাহ করা রক্তদাতা পুরুষের জন্য অবৈধ নয়। অনুরূপ স্বামী স্ত্রীকে বা স্ত্রী স্বামীকে রক্ত দান করলে বিবাহের কোন ক্ষতি হয় না।[3]
দ্বিতীয় কারণঃ বৈবাহিক সম্পর্ক :
১- পুরুষের জন্য (স্ত্রী ও শবশুরের মৃত্যু বা তালাকের পরেও) শাশুড়ী, নানশাশ ও দাদশাশ। (স্ত্রীর সাথে মিলন না হলেও) চিরতরে হারাম। অনুরূপ নারীর পক্ষে তার শবশুর, দাদোশবশুর ও নানাশবশুর অগম্য।
২- রমিতা (যার সাথে সঙ্গম হয়েছে এমন) স্ত্রীর (অপর স্বামীর) কন্যা ও তার বংশজাত কন্যা ও পুতিন বা নাতিন। (স্ত্রীর সাথে মিলন হলে তবে। নচেৎ মিলনের পূর্বে মারা গেলে বা তালাক দিলে তার মেয়ে অবৈধ বা অগম্যা নয়।) তদনুরূপ নারীর জন্য তার স্বামীর (অপর স্ত্রীর) ছেলে ও তার বংশজাত ছেলেও অবৈধ।
৩- পুরুষের জন্য তার সৎমা (বাপ তার সাথে মিলন করুক অথবা না করুক। বাপ মারা গেলে বা তালাক দিলেও) হারাম। অনুরূপ সৎ দাদী এবং নানীও।
নারীর জন্য তার সৎবাপ (মায়ের সাথে তার মিলন হলে) অগম্য। অনুরূপ সৎ দাদো এবং নানাও হারাম।
৪- পুরুষের জন্য তার নিজের পুত্রবধূ (আপন ঔরসজাত ছেলের স্ত্রী) অনুরূপ পুতবউ ও নাতবউ এবং নারীর জন্য তার নিজের গর্ভজাত কন্যার স্বামী (জামাই) অনুরূপ নাতজামাই ও পুতজামাই অবৈধ।
সুতরাং পুরুষের জন্য তার সৎশাশুড়ী, স্ত্রীর দুধমা, (বিতর্কিত) এবং পালয়িত্রী মা হারাম নয়। অনুরূপ নারীর জন্য তার সৎশ্বশুর, স্বামীর দুধবাপ (বিতর্কিত) এবং পালয়িতা বাপ অবৈধ নয়।
স্বামীর এক স্ত্রীর ছেলে-মেয়ের সাথে দ্বিতীয়া স্ত্রীর পূর্ব স্বামীর ঔরসজাত ছেলে-মেয়ের বিবাহ বৈধ।[4]
প্রকাশ যে, বৈবাহিক সূত্রে মিলনের ফলে যাদের সাথে বিবাহ অবৈধ, ব্যভিচার সূত্রে মিলনের ফলে তাদের সাথে বিবাহ অবৈধ কি না--তা নিয়ে বেশ বিতর্ক রয়েছে। অর্থাৎ যেমন বিবাহের পূর্বে কোন নারীর সাথে ব্যভিচার করলে তার মা বা মেয়েকে বিবাহ করা হারাম হবে কি না এবং বিবাহের পরে ব্যভিচার করলে ঐ নারীর মা বা মেয়ে (যে এই পুরুষের স্ত্রী) তার পক্ষে হারাম হয়ে যাবে কি না, শবশুর-বউ-এ ব্যভিচার করলে ছেলের উপর তার ঐ স্ত্রী হারাম হয়ে যাবে কি না, ব্যভিচারজাত কন্যাকে বিবাহ করা যাবে কি না, -এসব বিষয়ে বড্ড মতভেদ রয়েছে। অবশ্য কোন পক্ষের নিকটেই সহীহ কোন দলীল নেই। যদিও অনুমান, অভিরুচি ও বিবেকমতে হারাম সাব্যস্ত হওয়াই উচিৎ।[5]
পরন্তু বহু উলামা বলেন, কারো সাথে ব্যভিচার করলেই সে স্ত্রী এবং তার মা শাশুড়ী হয়ে যায় না। সুতরাং এতে ব্যভিচারের কোন প্রভাব নেই।[6]
নৈতিক শৈথিল্যের এমন অশ্লীলতা, পশুত্ব ও সমস্যা থেকে আল্লাহ মুসলিম সমাজকে মুক্ত ও পবিত্র রাখুন। আমীন।
পক্ষান্তরে বৈধরূপে স্ত্রী মনে করে সহবাস করলে সম্পর্কে প্রভাব পড়ে। যেমন; বিবাহ-বন্ধন শুদ্ধ না হয়েই সহবাস করলে অথবা সহবাস করার পর জানা গেল যে, ঐ স্ত্রীর সাথে স্বামীও কোন দুধ-মায়ের দুধ পান করেছে। এ ক্ষেত্রে স্ত্রী হারাম সাব্যস্ত হবে এবং তার মা ও মেয়েকে বিবাহ করা ঐ পুরুষের জন্য হারাম হবে।[7]
তৃতীয় কারণঃ দুধের সম্পর্ক :
যদি কোন শিশু (ছেলে অথবা মেয়ে) কোন ভিন্ন মহিলার দুধ পান করে থাকে, তবে সে তার দুধমা। অবশ্য ‘দুধমা’ সাব্যস্তের জন্য কয়েকটি শর্ত রয়েছে;
১। ঐ দুধপান শিশুর ২বছর বয়সের ভিতরে হতে হবে। দু’বছর পার হয়ে দুধপান করলে ‘মা’ সাব্যস্ত হবে না।[8]
২। তৃপ্তিসহকারে পাঁচ অথবা ততোধিক বার দুধপান করবে।[9] স্তনবৃন্ত চুষে অথবা মাইপোষ, চামচ কিংবা নলের সাহায্যে দুধ পেটে গেলে তবেই ‘মা’ সাব্যস্ত হবে।[10]
‘দুধমা’ সাব্যস্ত হলে তার সাথে এবং রক্ত-সম্পর্কীয় অন্যান্য আত্মীয়র ন্যায় ঐ মায়ের বংশের সকলের সাথে বিবাহ অবৈধ হবে।[11]
সুতরাং রীতিমত দুধপানকারী পুরুষ তার দুধ-মা, দুধ-বোন, দুধ-খালা, দুধ-ভাইঝি, দুধ-বোনঝি প্রভৃতিকে চিরদিনের জন্য বিবাহ করতে পারবে না। তদনুরূপ দুধপানকারী মহিলার তার দুধ-বাপ, দুধ-ভাই, দুধ-চাচা, দুধ-মামা, দুধ-ভাইপো, দুধ-বুনপো প্রভৃতির সাথে বিবাহ বৈধ নয়।
অবশ্য যে দুধ পান করেছে তার অন্য ভাই-বোনেরা ঐ মায়ের পক্ষে এবং তার ছেলেমেয়ে বা অন্যান্য আত্মীয়র পক্ষে হারাম নয়।[12]
কোন পুরুষ যদি (শিশুবেলায়) তার দাদীর দুধ রীতিমত পান করে থাকে, তবে তার পক্ষে রক্ত-সম্পর্কীয় মহিলা ছাড়াও চাচাতো, ফুফাতো এবং নানীর দুধ পান করে থাকলে মামাতো খালাতো বোনও হারাম। কারণ, এই বোনেরা তখন দুধ-ভাইঝি ও দুধ-বোনঝিতে পরিগণিত হয়ে যায়।[13]
উল্লেখ্য যে, শৃঙ্গারের সময় স্ত্রীর দুধ মুখে গেলে স্বামী-স্ত্রীর বিবাহ-বন্ধনে কোন ক্ষতি হয় না। কারণ, এটা রীতিমত দুধ পান নয়।
চতুর্থ কারণঃ লিআন :
স্বামীর সংসারে থেকে যদি স্ত্রী ব্যভিচার ক’রে তা অস্বীকার করে এবং এই ব্যভিচারের উপর যদি স্বামী ৪ জন সাক্ষী কাজীর সামনে উপস্থিত না করতে পারে, তবে কাজী প্রত্যেককে কসম করাবেন; প্রথমে স্বামী বলবে, ‘আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি যে, আমি আমার স্ত্রী অমুককে যে ব্যভিচারের অপবাদ দিয়েছি তাতে সত্যবাদী।’
এইরূপ চারবার বলার পর পঞ্চমবারে তাকে থামিয়ে কাজী বলবেন, ‘আল্লাহকে ভয় কর, এই (শেষ কসম)টাই আল্লাহর আযাব অনিবার্যকারী। (সত্য বল। কারণ,) আখেরাতের আযাব হতে দুনিয়ার আযাব (মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার শাস্তি) সহজতর।’
এরপরেও যদি সে বিরত না হয়, তবে পঞ্চমবারে বলবে, ‘আমি আমার স্ত্রী অমুককে যে ব্যভিচারের অপবাদ দিয়েছি, তাতে যদি আমি মিথ্যাবাদী হই তাহলে আমার উপর আল্লাহর অভিশাপ হোক!’
অতঃপর স্ত্রী অনুরূপ বলবে, ‘আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি যে, আমাকে আমার স্বামী অমুক যে ব্যভিচারের অপবাদ দিয়েছে তাতে ও মিথ্যাবাদী।’
এইরূপ চারবার বলার পর পঞ্চমবারে থামিয়ে কাজী তাকে বলবেন, আল্লাহকে ভয় কর, এটাই আল্লাহর আযাব অনিবার্যকারী, (সত্য বল। কারণ,) আখেরাতের আযাবের চেয়ে দুনিয়ার আযাব (ব্যভিচারের শাস্তি) সহজতর।’
এরপরেও যদি বিরত না হয়, তাহলে পঞ্চমবারে সে বলবে, ‘আমাকে আমার স্বামী অমুক যে ব্যভিচারের অপবাদ দিয়েছে, তাতে যদি ও সত্যবাদী হয়, তাহলে আমার উপর আল্লাহর গযব হোক!’
এতদূর করার পর কাজী স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ করে দেবেন। আর এতে কারো শাস্তি হবে না।[14]
এই ধরনের লা’নত ও অভিশাপের বিচ্ছেদকে ‘লিআন’ বলে। এই বিচ্ছেদ হওয়ার পর ঐ স্ত্রী ঐ স্বামীর জন্য চিরতরে হারাম হয়ে যায়। কোন প্রকারে আর পুনর্বিবাহ বৈধ নয়।[15]
প্রকাশ যে, রক্ত, দুধ ও বৈবাহিক সম্পর্কের ফলে যাদের আপোসে চিরতরে বিবাহ অবৈধ কেবল তাদের সামনেই মহিলার পর্দা নেই। বাকী বন্ধুত্ব, পাতানো, বা পীর ধরার (?) ফলে কেউ হারাম হয় না। সুতরাং বন্ধুর বোন, পাতানো বোন এবং পীর-বোনের (?) সাথেও বিবাহ হালাল এবং পর্দা ওয়াজেব।
আরো এমন কতকগুলি কারণ রয়েছে যাতে নারী-পুরুষের বিবাহ চিরতরে হারাম নয়; তবে সাময়িকভাবে হারাম। সেই নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হলে বিবাহ বৈধ। এমন কারণও কয়েকটিঃ-
প্রথম কারণঃ কুফর ও শির্ক।
কোন মুসলিম (নারী-পুরুষ) কোন কাফের বা মুশরিক (নারী-পুরুষ)কে বিবাহ করতে পারে না। অবশ্য ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হলে তার সাথে বিবাহ বৈধ। এ ব্যপারে মহান আল্লাহ বলেন,
﴿وَلاَ تَنْكِحُوا الْمُشْرِكَاتِ حَتَّى يُؤْمِنَّ وَلَأَمَةٌ مُؤْمِنَةٌ خَيْرٌ مِنْ مُشْرِكَةٍ وَلَوْ أَعْجَبَتْكُمْ وَلاَ تُنْكِحُوا الْمُشْرِكِينَ حَتَّى يُؤْمِنُوا وَلَعَبْدٌ مُؤْمِنٌ خَيْرٌ مِنْ مُشْرِكٍ وَلَوْ أَعْجَبَكُمْ أُولَئِكَ يَدْعُونَ إِلَى النَّارِ وَاللهُ يَدْعُو إِلَى الْجَنَّةِ وَالْمَغْفِرَةِ﴾
‘‘আর অংশীবাদী রমণী যে পর্যন্ত মুসলমান না হয়, তোমরা তাকে বিবাহ করো না। মুশরিক নারী তোমাদের পছন্দ হলেও নিশ্চয়ই মুসলিম ক্রীতদাসী তার চেয়ে উত্তম। আর মুসলমান না হওয়া পর্যন্ত অংশীবাদী পুরুষের সাথে কন্যার বিবাহ দিও না। অংশীবাদী পুরুষ তোমাদের পছন্দ হলেও মুসলিম ক্রীতদাস তার চেয়ে উত্তম। কারণ, ওরা তোমাদেরকে জাহান্নামের দিকে আহবান করে এবং আল্লাহ তোমাদেরকে নিজ অনুগ্রহ ও ক্ষমার দিকে আহবান করেন।’’[16]
(لَا هُنَّ حِلٌّ لَّهُمْ وَلَا هُمْ يَحِلُّونَ لَهُنَّ) (10) سورة الممتحنة
‘‘মু’মিন নারীগণ কাফের পুরুষদের জন্য এবং কাফের পুরুষরা মু’মিন নারীদের জন্য বৈধ নয়।’’[17]
শিয়া, কাদেয়ানী, কবুরী, মাযারী এবং মতান্তরে বেনামাযী প্রভৃতি পাত্র-পাত্রীর সাথে কোন (তওহীদবাদী) মুসলিম পাত্র-পাত্রীর বিবাহ বৈধ নয়।[18]
পক্ষান্তরে আসমানী কিতাবধারী ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টান সচ্চরিত্র নারীকে (ইসলাম গ্রহণ না করলেও) মুসলিম পুরুষ বিবাহ করতে পারে।[19]
তবে এর চেয়ে মুসলিম নারীই যে উত্তম তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু কোন মুসলিম নারীর সাথে কোন কিতাবধারী পুরুষের বিবাহ বৈধ নয়; যতক্ষণ না সে ইসলাম গ্রহণ করেছে। যেহেতু ইসলাম চির উন্নত, অবনত হয় না। তাছাড়া মুসলিমরা সকল নবীর প্রতি ঈমান রাখে, কিন্তু কিতাবধারীরা ইসলামের সর্বশেষ নবী (ﷺ)-এর প্রতি ঈমান রাখে না।[20]
প্রকাশ যে, মুসলিম নামধারী মুশরিকরা (যারা আল্লাহ ছাড়া পীর, কবর বা মাযারের নিকট প্রয়োজনাদি ভিক্ষা করে, তারা) আহলে কিতাবের মত নয়। তাদের সাথে বিবাহ-শাদী বৈধ নয়।[21]
কোন পুরুষ ইসলাম গ্রহণ করলেও চট্ করে তার সাথে মুসলিম নারীর বিবাহ দেওয়া উচিৎ নয়। মুসলিম হয়ে নামায-রোযা ও অন্যান্য ধর্মীয় বিষয় পালন করছে কি না, তা দেখা উচিৎ। নচেৎ এমনও হতে পারে (বরং অধিকাংশ এমনটাই হয়) যে, মুসলিম যুবতীর রূপ ও প্রেমে মুগ্ধ হয়ে কেবল তাকেই পাবার উদ্দেশ্যে নামে মাত্র মুসলিম হয়ে ইসলামে ফাঁকি দেয়।[22]
কোন মুসলিম পুরুষ অমুসলিম নারীকে বিবাহ করতে চাইলে তাকে প্রকৃত মুসলিম করে ইদ্দত দেখে তারপর বিবাহ করবে। নামায-রোযা প্রভৃতিতে যত্নবান না হলে বিবাহ বৈধ হবে না।[23]
দ্বিতীয় কারণঃ- অপরের স্বামীত্বঃ
অপরের বিবাহিতা স্ত্রী তার স্বামীত্বে থাকতে আর অন্য পুরুষের জন্য বৈধ নয়। সে মারা গিয়ে অথবা তালাক দিয়ে ইদ্দতের যথা সময় অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত ঐ রমণীকে বিবাহ করা হারাম। সুতরাং ঐ মহিলা আসলে গম্যা, কিন্তু অপরের স্বামীত্বে থাকার জন্য সাময়িকভাবে অন্যের পক্ষে অবৈধ। এমন বিবাহিত সধবাকে কেউ বিয়ে করলেও বিবাহ-বন্ধনই হয় না। সে প্রথম স্বামীরই অধিকারভুক্ত থাকে, আর দ্বিতীয় স্বামী ব্যভিচারী হয়। পরন্তু একটি মহিলা একাধিক স্বামী গ্রহণ করতে পারে না। কারণ এতে বংশ ও সন্তানের অবস্থা সর্বহারা হয়। পক্ষান্তরে একজন পুরুষ একাধিক স্ত্রী (৪টি পর্যন্ত) গ্রহণ করতে পারে।[24] কারণ, এতে ঐ ভয় থাকে না।
তাছাড়া বলাই বাহুল্য যে, ইসলাম মানবপ্রকৃতির জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ ধর্ম। জীবনের সর্বপ্রকার সমস্যার সমাধান খুঁজে মিলে এই ধর্মে। মানবকূলের সকল মানুষের প্রকৃতি, যৌনক্ষুধা বা কামশক্তি সমান নয়। স্ত্রী তার বীর্যবান স্বামীর সম্পূর্ণ ক্ষুধা নাও মিটাতে পারে; বিশেষ করে যদি সে রোগা হয় অথবা তার ঋতুর সময় দীর্ঘস্থায়ী হয়। পক্ষান্তরে ব্যভিচারও মানবচরিত্রের প্রতিকূল।
স্ত্রী বন্ধ্যা হলে বংশে বাতি দেবার জন্য সন্তান লাভের উদ্দেশ্যে অথবা একজন বিধবা বা পরিত্যক্তার সৌভাগ্য ফিরিয়ে আনতে এবং আরো অন্যান্য যুক্তিযুক্ত কারণে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ বিবাহ সংসারে প্রয়োজন হয়। আর এটা নৈতিকতার পরিপন্থী নয়। চরিত্র ও নৈতিকতার প্রতিকূল তো এক বা একাধিক উপপত্নী বা ‘গার্ল্স ফ্রেন্ড্’ গ্রহণ করা।[25]
পক্ষান্তরে একাধিক বিবাহের শর্ত আছেঃ
১- একই সঙ্গে যেন চারের অধিক না হয়।
২- স্ত্রীদের মাঝে যেন ন্যায়পরায়ণতা থাকে। ভরণ-পোষণ, চরিত্র-ব্যবহার প্রভৃতিতে যেন সকলকে সমান চোখে দেখা হয়। সকলের নিকট যেন সমানভাবে রাত্রি-বাস বা অবস্থান করা হয়। নচেৎ একাধিক বিবাহ হারাম।[26]
অবশ্য অন্তরের গুপ্ত প্রেমকে সকলের জন্য সমানভাবে ভাগ করা অসম্ভব।[27]
তাই অন্তর যদি কাউকে অধিক পেতে চায় বা ভালোবাসে তবে তা দূষণীয় নয়। কিন্তু প্রকাশ্যে সকলের সাথে সমান ব্যবহার প্রদর্শন ওয়াজেব।
একাধিক বিবাহ করলে কোন স্ত্রীর মন্দ-চর্চা অন্য স্ত্রীর নিকট করবে না। কোন স্ত্রীকে অন্য স্ত্রী প্রসঙ্গে কুমন্তব্য বা কুৎসা করতে সুযোগ দেবে না। তাদের আপোষে যাতে ঈর্ষাঘটিত কোন মনোমালিন্য বা দুর্ব্যবহার না হয়, তার খেয়াল রাখবে। পৃথক-পৃথক বাসা হলেই শান্তির আশা করা যায়। নচেৎ ‘নিম তেঁতো, নিষিন্দি তেঁতো, তেঁতো মাকাল ফল, তাহারও অধিক তেঁতো দু’ সতীনের ঘর।’ বিশেষ করে বেপর্দা পরিবেশ হলে তো তিক্তময় নরক সে সংসার।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, দ্বিতীয় বিবাহ করার সময় প্রথম স্ত্রীর অনুমতি জরুরী নয়।[28]
কুফরীর কারণে স্বামীর অধিকার থেকে ছিন্ন হয়ে মুসলিমদের যুদ্ধবন্দিনীরূপে কোন মুজাহিদের ভাগে এলে এক মাসিক পরীক্ষার পর অথবা গর্ভ হলে প্রসব ও নেফাসকাল পর্যন্ত অপেক্ষার পর অধিকারভুক্ত হবে; যদিও তার স্বামী বর্তমানে জীবিত আছে।[29]
কোন মহিলার স্বামী মারা গেলে অথবা তালাক দিলে সে তার ইদ্দতকাল পর্যন্ত ঐ স্বামীর অধিকারে থাকে। অতএব কোন রমণীকে তার ইদ্দতকালে বিবাহ করা অবৈধ।[30]
ইদ্দতের বিস্তারিত বিবরণ পরে আসবে ইনশাআল্লাহ।
কোন মহিলা গর্ভবতী থাকলে গর্ভকাল তার ইদ্দত। গর্ভাবস্থায় বিবাহ বৈধ নয়। অবৈধ গোপন প্রেমে যার ব্যভিচারে গর্ভবতী হয়েছে সেই প্রেমিক বিবাহ করলেও গর্ভাবস্থায় আক্দ সহীহ নয়। প্রসবের পরই আক্দ সম্ভব।[31]
কোন মহিলার স্বামী নিখোঁজ হলে নিখোঁজ হওয়ার দিন থেকে পূর্ণ চার বছর অপেক্ষা করার পর আরো চার মাস দশদিন স্বামী-মৃত্যুর ইদ্দত পালন করে দ্বিতীয় স্বামী গ্রহণ করতে পারে। এই নির্ধারিত সময়ের পূর্বে তার বিবাহ হারাম। বিবাহের পর তার পূর্ব স্বামী ফিরে এলে তার এখতিয়ার হবে; স্ত্রী ফেরৎ নিতে পারে অথবা মোহর ফেরৎ নিয়ে তাকে ঐ স্বামীর জন্য ত্যাগ করতেও পারে।[32]
স্ত্রী চাইলে আর নতুনভাবে বিবাহ আক্দের প্রয়োজন নেই। কারণ, স্ত্রী তারই এবং দ্বিতীয় আক্দ তার ফিরে আসার পর বাতিল। তবে তাকে ফিরে নেওয়ার পূর্বে ঐ স্ত্রী (এক মাসিক) ইদ্দত পালন করবে।[33]
গর্ভবতী হলে প্রসবকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। আর সে সময়ে দ্বিতীয় স্বামী থেকে পর্দা ওয়াজেব হয়ে যাবে।
তৃতীয় কারণঃ- দুই নিকটাত্মীয়র জমায়েত
সাধারণতঃ একাধিক বিবাহে অশান্তি বেশীই হয়। সতীন তার সতীনকে সহজে সইতে পারে না। সতীনে-সতীনে বিচ্ছিন্নতা থাকে। অতএব সতীন একান্ত নিকটাত্মীয় হলে আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন হয়, যা হারাম। তাছাড়া নিকটাত্মীয় সতীনের কথায় গায়ে ঝালা ধরে বেশী, দ্বন্দ্ব বাড়ে অধিক। কথায় বলে ‘আনসতীনে নাড়ে চাড়ে, বোন সতীনে পুড়িয়ে মারে।’ তাই ইসলাম এমন একান্ত নিকটাত্মীয়দেরকে একত্রে স্ত্রীরূপে জমা করতে নিষেধ করেছে। সুতরাং স্ত্রী থাকতে তার (সহোদরা, বৈপিত্রেয়ী, বৈমাত্রেয়ী বা দুধ) বোন (অর্থাৎ, শালী) কে বিবাহ করা হারাম। তদনুরূপ স্ত্রীর বর্তমানে তার খালা বা বোনঝি, ফুফু বা ভাইঝিকে বিবাহ করা অবৈধ। স্ত্রী মারা গেলে বা তালাক দিলে ইদ্দতের পর তার ঐ নিকটাত্মীয়র কাউকে বিবাহ করতে বাধা নেই।
স্ত্রীর কাঠবাপের (বা মায়ের স্বামীর) অন্য স্ত্রীর মেয়েকে বিবাহ করতে দোষ নেই।[34]
চতুর্থ কারণঃ ইহরাম
হজ্জ বা উমরায় ইহরাম বাঁধা অবস্থায় বিবাহ ও বিবাহের পয়গাম হারাম। এই অবস্থায় কারো বিবাহ হলেও তা বাতিল।[35]
পঞ্চম কারণঃ চারের অধিক সংখ্যা
চার স্ত্রী বর্তমান থাকতে পঞ্চম বিবাহ হারাম।[36] চারের মধ্যে কেউ ইদ্দতে থাকলে তার ইদ্দত শেষ না হওয়া পর্যন্ত অন্য বিবাহ করা যাবে না।
ষষ্ঠ কারণঃ তিন তালাক।
স্ত্রীকে তিন তালাক তিন পবিত্রতায় দিলে অথবা জীবনের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে তিনবার তালাক দিলে ঐ স্ত্রীকে পুনঃ বিবাহ করা বৈধ নয়। যদি একান্তই তাকে পুনরায় ফিরে পেতে চায়, তবে ঐ স্ত্রী দ্বিতীয় স্বামী ও তার যৌনস্বাদ গ্রহণের পর সে সেবচ্ছায় তালাক দিলে অথবা মারা গেলে তবে ইদ্দতের পর তাকে পুনর্বিবাহ করতে পারে। নচেৎ তার পূর্বে নয়।[37]
স্ত্রীকে তিন তালাক দেওয়ার পর লজ্জিত হয়ে ভুল বুঝতে পেরে তাকে ফিরে পেতে ‘হালালা’ পন্থা অবলম্বন বৈধ নয়। অর্থাৎ, স্ত্রীকে হালাল করার জন্য পরিকল্পিতভাবে কোন বন্ধু বা চাচাতো-মামাতো ভায়ের সাথে বিবাহ দিয়ে এক রাত্রি বাস করে তালাক দিলে পরে ইদ্দতের পর নিজে বিবাহ করা এক প্রকার ধোঁকা এবং ব্যভিচার। যাতে দ্বিতীয় স্বামী এক রাত্রি ব্যভিচার করে এবং প্রথম স্বামী ঐ স্ত্রীকে হালাল মনে করে ফিরে নিয়েও তার সাথে চিরদিন ব্যভিচার করতে থাকে। কারণ, প্রকৃতপক্ষে স্ত্রী ঐভাবে তার জন্য হালাল হয় না।
যে ব্যক্তি হালাল করার জন্য ঐরূপ বিবাহ করে, হাদীসের ভাষায় সে হল ‘ধার করা ষাঁড়।’[38] এই ব্যক্তি এবং যার জন্য হালাল করা হয় সে ব্যক্তি (অর্থাৎ প্রথম স্বামী) আল্লাহ ও তদীয় রসূলের অভিশপ্ত।[39]
জায়বদলী বা বিনিময়-বিবাহ বিনা পৃথক মোহরে বৈধ নয়। এ ওর বোন বা বেটিকে এবং ও এর বোন বা বেটীকে বিনিময় ক’রে পাত্রীর বদলে পাত্রীকে মোহর বানিয়ে বিবাহ ইসলামে হারাম।[40] অবশ্য বহু উলামার নিকট উভয় পাত্রীর পৃথক মোহর হলেও জায়বদলী বিয়ে বৈধ নয়। (যদি তাতে কোন ধোকা-ধাপ্পা দিয়ে নামকে-ওয়াস্তে মোহর বাঁধা হয় তাহলে।[41]
মুত্আহ বা সাময়িক বিবাহও ইসলামে বৈধ নয়। কিছুর বিনিময়ে কেবল এক সপ্তাহ বা মাস বা বছর স্ত্রীসঙ্গ গ্রহণ করে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় যেহেতু ঐ স্ত্রী ও তার সন্তানের দুর্দিন আসে, তাই ইসলাম এমন বিবাহকে হারাম ঘোষণা করেছে।[42]
অনুরূপ তালাকের নিয়তে বিবাহ এক প্রকার ধোঁকা। বিদেশে গিয়ে বা দেশেই বিবাহ-বন্ধনের সময় মনে মনে এই নিয়ত রাখা যে, কিছুদিন সুখ লুটে তালাক দিয়ে দেশে ফিরব বা চম্পট দেব, তবে এমন বিবাহও বৈধ নয়। (এরূপ করলে ব্যভিচার করা হয়।) কারণ, এতেও ঐ স্ত্রী ও তার সন্তানের অসহায় অবস্থা নেমে আসে।[43] যাতে নারীর মান ও অধিকার খর্ব হয়।
কোন তরুণীর বিনা সম্মতিতে জোরপূর্বক বিবাহ দেওয়া হারাম। এমন বিবাহ-বন্ধন শুদ্ধই হয় না।[44]
বাল্য-বিবাহ বৈধ।[45] তবে সাবালক হওয়ার পর স্বামী-স্ত্রীর এক অপরকে পছন্দ না হলে তারা বিবাহবন্ধন ছিন্ন করতে পারে।[46]
সববংশ বা সবগোত্রের আত্মীয় গম্য পাত্র-পাত্রীর বিবাহ বৈধ। তবে ভিন্ন গোত্রে অনাত্মীয়দের সাথেই বৈবাহিক-সূত্র স্থাপন করা উত্তম।[47]
বিশেষ করে সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি ও মনোমালিন্য নিয়ে বাড়াবাড়ি অধিক হয় সবগোত্রে ঘরে-ঘরে বিবাহ হলে। অভিজ্ঞরা বলেন, ‘ঘরে-ঘরে বিয়ে দিলে, ঘর পর হয়ে যায়। আত্মীয়তা বাড়াতে গিয়ে তা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় একেবারেই।’ অবশ্য সর্বক্ষেত্রে দ্বীনদারীই হল কষ্টিপাথর।
কোন মুসলিম কোন ব্যভিচারিণী নারীকে বিবাহ করতে পারে না। বরং এ ব্যাপারে ঐরূপ নারী মনোমুগ্ধকর সুন্দরী রূপের ডালি বা ডানা-কাটা পরি হলেও মুসলিম পুরুষের তাতে রুচি হওয়াই উচিৎ নয়। একান্ত প্রেমের নেশায় নেশাগ্রস্ত হলেও তাকে সহধর্মিনী করা হারাম।
এ ব্যাপারে আল্লাহ পাক বলেন,
﴿الزَّانِي لاَ يَنْكِحُ إِلاَّ زَانِيَةً أَوْ مُشْرِكَةً وَالزَّانِيَةُ لا يَنْكِحُهَا إِلاَّ زَانٍ أَوْ مُشْرِكٌ وَحُرِّمَ ذَلِكَ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ﴾
‘‘ব্যভিচারী কেবল ব্যভিচারিণী অথবা অংশীবাদিনীকে এবং ব্যভিচারিণী কেবল ব্যভিচারী অথবা অংশীবাদী পুরুষকে বিবাহ করে থাকে। আর মুমিন পুরুষদের জন্য তা হারাম করা হল।’’[48]
সুতরাং অসতী নারী মুশরিকের উপযুক্ত; মুসলিমের নয়। কারণ উভয়েই অংশীবাদী; এ পতির প্রেমে উপপতিকে অংশীস্থাপন করে এবং ও করে একক মা’বূদের ইবাদতে অন্য বাতিল মা’বূদকে শরীক। (অবশ্য অসতী হলেও কোন মুশরিকের সাথে কোন মুসলিম নারীর বিবাহ বৈধ নয়।)
পক্ষান্তরে ব্যভিচারিণী যদি তওবা করে প্রকৃত মুসলিম নারী হয়, তাহলে এক মাসিক অপেক্ষার পর তবেই তাকে বিবাহ করা বৈধ হতে পারে। গর্ভ হলে গর্ভাবস্থায় বিবাহ-বন্ধন শুদ্ধ নয়। প্রসবের পরই বিবাহ হতে হবে।[49]
[2] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ৯/৭৩)
[3] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ৩/৩৭০, ৪/৩৩২)
[4] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ২/২৬২, ৯/৬৭)
[5] (সিলসিলা যয়ীফাহ ১/৫৬৬, ইখতিয়ারাত ইবনে তাইমিয়্যাহ ৫৮৫-৫৮৮পৃঃ, ফাতাওয়া মুহাম্মদ বিন ইব্রাহীম ১০/১৩০)
[6] (মুমঃ ৭/৪৪)
[7] (ঐ ৭/৪৫)
[8] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ২৩৩)
[9] (মুসলিম)
[10] (আহকামু খিতবাতিন নিকাহি ফিল ইসলাম, ডক্টর শওকত উলাইয়্যান)
[11] (বুখারী ৫০৯৯নং, মুসলিম)
[12] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ৬/২৬৩)
[13] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ৬/২৬৬)
[14] (সূরা আন-নূর (২৪) : ৬-৯, বুখারী, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩৩০৭নং)
[15] (আহকামু খিতবাতিন নিকাহি ফিল ইসলাম ১১৬পৃঃ)
[16] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ২২১)
[17] (সূরা আল-মুমতাহিনা (৬০) : ১০)
[18] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ১৬/১১৫,১৭/৬১, ২৮/৯৩)
[19] (সূরা আল-মায়িদা (৫) : ৫)
[20] (ইসলাম মেঁ হালাল অ হারাম, ইউসুফ ক্বারযাবী, অনুবাদ, শাম্স পীরযাদাহঃ ২৪৫পৃঃ)
[21] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ২৮/৯৩)
[22] (ফাতাওয়াল মারআহ ৪৬পৃঃ)
[23] (বুখারী ৫২৮৬নং, ফাতাওয়া নাযীরিয়্যাহ ২/৩৫৭)
[24] (সূরা আন-নিসা (৪) : ৩)
[25] (তামবীহাতুল মু’মিনাত ৬৭-৭৫পৃঃ দ্রঃ)
[26] (সূরা আন-নিসা (৪) : ৩)
[27] (সূরা আন-নিসা (৪) : ১২৯)
[28] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ২৫/৬৭)
[29] (সূরা আন-নিসা (৪) : ২৮)
[30] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ২৩৫)
[31] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ৯/৫৪,৭২)
[32] (মানারুস সাবীল ২/৮৮পৃঃ)
[33] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৭৬৬)
[34] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ৯/৫৭)
[35] (যাদুল মাআদ ৪/৬)
[36] (সূরা আল-বাক্বারা (৪) :৩)
[37] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ২৩০)
[38] (ইরওয়াউল গালীল ৬/৩০৯)
[39] (ইরওয়াউল গালীল ১৮৯৭ নং, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩২৯৬)
[40] (বুখারী, মুসলিম ইত্যাদি)
[41] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ৪/৩২৮, ৯/৬৮)
[42] (বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩১৪৭নং)
[43] (ফাতাওয়াল মারআহ ৪৯পৃঃ)
[44] (ফাতাওয়াল মারআহ ৪৮ পৃঃ)
[45] (মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩১২৯নং)
[46] (বুখারী ৫১৩৮নং, আবু দাঊদ, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩১৩৬নং)
[47] (ফাতাওয়াল মারআহ ৪৭পৃঃ)
[48] (সূরা আন-নূর (২৪) : ৩)
[49] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৭৮০)
পত্নী পুরুষের সহধর্মিনী, অর্ধাঙ্গিনী, সন্তানদাত্রী, জীবন-সঙ্গিনী, গৃহের গৃহিণী, সন্তানের জননী, হৃদয়ের শান্তিদায়িনী, রহস্য রক্ষাকারিণী, তার সুখী সংসারের প্রধান সদস্যা। সুতরাং এমন সাথী নির্বাচনে পুরুষকে সত্যই ভাবতে হয়, বুঝতে হয়। শুধুমাত্র প্রেম, উচ্ছৃঙ্খলতা ও আবেগে নয়; বরং বিবেক ও দিমাগে সে বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে হয়।
সাধারণতঃ মানুষ তার ভাবী-সঙ্গিনীর প্রভাব-প্রতিপত্তি, মান-যশ-খ্যাতি, ধন-সম্পদ, কুলীন বংশ, মনোলোভা রূপ-সৌন্দর্য প্রভৃতি দেখে মুগ্ধ হয়ে তার জীবন-সঙ্গ লাভ করতে চায়; অথচ তার আধ্যাত্মিক ও গুণের দিকটা গৌণ মনে করে। যার ফলে দাম্পত্যের চাকা অনেক সময় অচল হয়ে রয়ে যায় অথবা সংসার হয়ে উঠে তিক্তময়। কিন্তু জ্ঞানী পুরুষ অবশ্যই খেয়াল রাখে যে,
‘‘দেখিতে পলাশ ফুল অতি মনোহর,
গন্ধ বিনে তারে সবে করে অনাদর।
যে ফুলের সৌরভ নাই, কিসের সে ফুল?
কদাচ তাহার প্রেমে মজেনা বুলবুল।
গুণীর গুণ চিরকাল বিরাজিত রয়,
তুচ্ছ রূপ দুই দিনে ধূলিসাৎ হয়।’’
প্রিয় নবী (ﷺ) বলেন,
تُنْكَحُ الْمَرْأَةُ لِأَرْبَعٍ لِمَالِهَا وَلِحَسَبِهَا وَجَمَالِهَا وَلِدِينِهَا فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّينِ تَرِبَتْ يَدَاكَ.
‘‘রমণীকে তার অর্থ, আভিজাত্য, রূপ-সৌন্দর্য ও দ্বীন-ধর্ম দেখে বিবাহ করা হয়। কিন্তু তুমি দ্বীনদারকে পেয়ে কৃতকার্য হও। তোমার হস্ত ধূলিধূসরিত হোক।’’[1]
তিনি আরো বলেন,
ليَتَّخذَ أحَدُكُمْ قَلْباً شَاكِراً وَلِسَاناً ذَاكراً وَزَوْجَةً صَالِحَةً تُعينُهُ عَلَى أَمرِ الآخِرَة.
‘‘তোমাদের প্রত্যেকের শুক্রকারী অন্তর ও যিক্রকারী জিহ্বা হওয়া উচিৎ। আর এমন মুমিন স্ত্রী গ্রহণ করা উচিৎ; যে তার আখেরাতের কাজে সহায়তা করবে।’’[2]
সুতরাং এমন পাত্রী পছন্দ করা উচিৎ, যে হবে পুণ্যময়ী, সুশীলা, সচ্চরিত্রা, দ্বীনদার, পর্দানশীন; যাকে দেখলে মন খুশীতে ভরে ওঠে, যাকে আদেশ করলে সত্বর পালন করে, স্বামী বাইরে গেলে নিজের দেহ, সৌন্দর্য ও ইজ্জতের এবং স্বামীর ধন-সম্পদের যথার্থ রক্ষণা-বেক্ষণা করে।[3]
মহান আল্লাহ বলেন,
﴿فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللهُ﴾
‘‘সুতরাং সাধবী নারী তো তারা, যারা (তাদের স্বামীদের অনুপস্থিতিতে ও লোক চক্ষুর অন্তরালে) অনুগতা এবং নিজেদের ইজ্জত রক্ষাকারিণী; আল্লাহর হিফাযতে (তওফীকে) তারা তা হিফাযত করে।’’[4]
এরপর দেখা উচিৎ, ভাবী-সঙ্গিনীর পরিবেশ। শান্ত প্রকৃতির মেজাজ, মানসিক সুস্থতা ইত্যাদি; যাতে সংসার হয় প্রশান্তিময়। জবালাময়তা থেকে দূর হয় বাক্যালাপ, লেন-দেন ও সকল ব্যবহার।
বিবাহের একটি মহান উদ্দেশ্য হল সন্তান গ্রহণ । এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে স্ত্রী নির্বাচন বাঞ্ছনীয়। প্রিয় নবী (ﷺ) বলেন,
تَزَوَّجُوا الْوَدُودَ الْوَلُودَ فَإِنِّي مُكَاثِرٌ بِكُمْ الْأُمَمَ.
‘‘অধিক প্রেমময়ী, অধিক সন্তানদাত্রী রমণী বিবাহ কর। কারণ, আমি তোমাদেরকে নিয়ে কিয়ামতে অন্যান্য উম্মতের সামনে (সংখ্যাধিক্যের ফলে) গর্ব করব।’’[5]
অতঃপর সাথীর রূপ-সৌন্দর্য তো মানুষের প্রকৃতিগত বাঞ্ছিত বাসনা। যেহেতু স্ত্রী সুন্দরী হলে মনের প্রশান্তি ও আনন্দ অধিক হয়। অন্যান্য রমণীর প্রতি কখনই মন ছুটে না। পরন্তু ‘‘আল্লাহ সুন্দর। তিনি সৌন্দর্যকে পছন্দ করেন।’’[6]
অনেক যুবক আছে যারা ভুল করে মহিলার চেহারাকে বিবাহ করে, কিন্তু সংসার করে তার সবকিছু নিয়ে! ফলে অশান্তি দেখা দেয় সংসারে।
অতঃপর দেখার বিষয় সঙ্গিনীর কৌমার্য। কুমারীর নিকট যে সুখ আছে অকুমারীর নিকট তা নেই। এটা তো মানুষের প্রকৃতিগত পছন্দ। যেহেতু ভালোবাসার প্রথম উপহার তার নিকট পেলে দাম্পত্যে পূর্ণ পরিতৃপ্তি আসে। নচেৎ যদি তার মনে ভালোবাসার নিক্তি পূর্ব ও বর্তমান স্বামীর প্রেম ওজন করতে শুরু করে, তবে সেই তুলনায় তার হৃদয় কখনো পূর্ব স্বামীর দিকে ঝুঁকে বর্তমান স্বামীকে তুচ্ছজ্ঞান করে। আবার কখনো নিজের ভাগ্যের এই পরিবর্তনকে বড় দুর্ভাগ্য মনে ক’রে ভালোবাসার ডালি খালি ক’রে রসহীন সংসার করে বর্তমান স্বামীর দেহপাশে। কিন্তু মন থাকে সেই মৃত অথবা সেই তালাকদাতা স্বামীর নিকট। ফলে দাম্পত্য জীবন মধুর হয়ে গড়ে উঠতে পারে না। অবশ্য বর্তমান স্বামী পূর্ব স্বামী হতে সর্ববিষয়ে উত্তম হলে সে কথা ভিন্ন। পরন্তু প্রকৃত দাম্পত্য-সুখ উপভোগ করার উদ্দেশ্যে প্রিয় নবী (ﷺ) এক সাহাবীকে কুমারী নারী বিবাহ করতে উদ্বুদ্ধ করে বলেছিলেন,
أَفَلاَ تَزَوَّجْتَ بِكْرًا تُلاَعِبُكَ وَتُلاَعِبُهَا.
‘‘কেন কুমারী বিবাহ করলে না? সে তোমাকে নিয়ে এবং তুমি তাকে নিয়ে প্রেমকেলি করতে।’’[7]
অন্যত্র তিনি বলেন,
عَلَيْكُمْ بِالأَبْكَارِ فَإِنَّهُنَّ أَعْذَبُ أَفْوَاهًا وَأَنْتَقُ أَرْحَامًا (وأسخًنُ أقبالاً، وأقَلُّ خباً) وَأَرْضَى بِالْيَسِيرِ.
‘‘তোমরা কুমারী বিবাহ কর। কারণ কুমারীদের মুখ অধিক মিষ্টি, তাদের গর্ভাশয় অধিক সন্তানধারী, তাদের যোনীপথ অধিক উষ্ণ, তারা ছলনায় কম হয় এবং সবল্পে অধিক সন্তুষ্ট থাকে।’’[8]
উর্বর জমিতে যে ফসলের বীজ সর্বপ্রথম রোপিত হয় সেই ফসলই ফলনে অধিক ও উত্তম হয়। ফসল তুলে সেই জমিতেই অন্য ফসল রোপন করলে আর সেই সোনার ফসল ফলে না। অনুরূপ ভালোবাসার বীজও।
অবশ্য যার সংসারে পাক্কা গৃহিণীর প্রয়োজন, যে তার ছোট ছোট ভাই-বোন ইত্যাদির সঠিক প্রতিপালন চায়, তাকে অকুমারী বিধবা বিবাহ করাই উচিৎ।[9]
পরন্তু যদি কেউ কোন বিধবা বা পরিত্যক্তার প্রতি এবং তার সন্তান-সন্ততির প্রতি সদয় হয়ে তাকে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ ক’রে তার দুর্দিন দূর ক’রে সুদিন আনে, তবে নিশ্চয় সে ব্যক্তি অধিক সওয়াবের অধিকারী।[10]
সর্বদিক দিয়ে নিজের মান যেমন, ঠিক সেই সমপর্যায় মান ও পরিবেশের পাত্রী পছন্দ করা উচিৎ। এতে কেউ কারোর উপর গর্ব প্রকাশ না করতে পেরে কথার আঘাতে প্রেমের গতি বাধাপ্রাপ্ত হবে না। পজিশন, শিক্ষা, সভ্যতা, অর্থনৈতিক অবস্থা, বংশ প্রভৃতি উভয়ের সমান হলে সেটাই উত্তম। যেমন উভয়ের বয়সের মধ্যে বেশী তারতম্য থাকা উচিৎ নয়। নচেৎ ভবিষ্যতে বিভিন্ন জোয়ার-ভাটা দেখা দিতে পারে।
উপর্যুক্ত সর্বপ্রকার গুণ ও পজিশনের পাত্রী পেলেই সোনায় সোহাগা। এমন দাম্পত্য হবে চিরসুখের এবং এমন স্বামী হবে বড় সৌভাগ্যবান। পক্ষান্তরে কিছু না পেলেও যদি দ্বীন পায়, তবে তাও তার সৌভাগ্যের কারণ অবশ্যই।
সুতরাং বউ ও জামাই পছন্দের কষ্টিপাথর একমাত্র দ্বীন ও চরিত্র। বংশের উচ্চ-নীচতা কিছু নেই। যেহেতু মানুষ সকলেই সমান। সকল মুসলিম ভাই-ভাই। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ ذَكَرٍ وَأُنْثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوباً وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ﴾
‘‘হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী হতে সৃষ্টি করেছি। পরে তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে; যাতে তোমরা এক অপরের সাথে পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই আল্লাহর নিকট অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে ব্যক্তি অধিক সংযমী (মুত্তাকী ও পরহেযগার)।’’[11]
তাছাড়া ‘ভালো-মন্দ কোন গোষ্ঠী-বর্ণের মধ্যে নির্দিষ্ট নয়। প্রত্যেক বস্ত্তর উত্তম, মধ্যম ও অধম আছে।’ আর ‘কাকের ডিম সাদা হয়, পন্ডিতের ছেলে গাধাও হয়।’ সুতরাং বিবেচ্য হল, যে মানুষকে নিয়ে আমার দরকার কেবল তারই চরিত্র ও ব্যবহার। অবশ্য পারিপাশির্বক অবস্থা দেখাও দরকার নিশ্চয়ই। কারণ, তাতেও কুপ্রভাব পড়ার আশঙ্কা থাকতে পারে।
অতএব বর-কনে নির্বাচনের সময়ঃ
১। পাত্র বা পাত্রী কোন্ স্কুলে পড়েছে জানার আগে কোন্ পরিবেশে মানুষ হয়েছে--তা জানার চেষ্টা করুন। কারণ, অনেক সময় বংশ খারাপ হলেও পরিবেশ-গুণে মানুষ সুন্দর ও চরিত্রবান হয়ে গড়ে উঠে।
২। পাত্র বা পাত্রীর চরিত্র দেখার আগে তার বাপ-মায়ের চরিত্রও বিচার্য। কারণ, সাধারণতঃ ‘আটা গুণে রুটি আর মা গুণে বেটি’ এবং ‘দুধ গুণে ঘি ও মা গুণে ঝি’ হয়ে থাকে। আর ‘বাপকা বেটা সিপাহি কা ঘোড়া, কুছ না হো তো থোড়া থোড়া।’
৩। বিবাহ একটি সহাবস্থান কোম্পানী প্রতিষ্ঠাকরণের নাম। সুতরাং এমন সঙ্গী নির্বাচন করা উচিৎ যাতে উভয়ের পানাহার প্রকৃতি ও চরিত্রে মিল খায়। নচেৎ অচলাবস্থার আশঙ্কাই বেশী।[12]
অবশ্য কারো বাহ্যিক দ্বীনদারী দেখেও ধোঁকা খাওয়া উচিৎ নয়। কারণ, সকাল ৭ টায় কাউকে নামায পড়তে দেখলেই যে সে চাশ্তের নামায পড়ে--সে ধারণা ভুলও হতে পারে। কেননা, হতে পারে সে চাশ্তের নয়, বরং ফজরের কাযা আদায় করছিল।
অনুরূপ কারো বাপের দ্বীনদারীর মতো কথা শুনে অথবা কেবল কারো ভাইয়ের বা বুনায়ের দ্বীনদারীর কথা শুনে তার দ্বীনদারী হওয়াতে নিশ্চিত হয়ে ধোঁকা খাওয়াও অনুচিত। খোদ পাত্র বা পাত্রী কেমন তা সর্বপ্রথম ও শেষ বিচার্য।
অনুরূপ মাল-ধন আছে কি না, কিছু পাব কি না পাব---তাও বিচার্য নয়। কারণ, তা তো আজ আছে কাল নাও থাকতে পারে। আবার আজ না থাকলে কাল এসে যেতেও পারে। আমি যেমন ঠিক তেমনি ঘরে বিবাহ করা বা দেওয়াই উচিৎ। বিশেষ করে ঘুষ (মোটা টাকা পণ) দিয়ে বড় ঘরে ঢুকতে যাওয়া ঠিক নয়।
জ্ঞানীরা বলেন, ‘তোমার চেয়ে যে নীচে তার সঙ্গ গ্রহণ করো না। কারণ, হয়তো তুমি তার মূর্খতায় কষ্ট পাবে এবং তোমার চেয়ে যে উচেচ তারও সাথী হয়ো না। কারণ, সম্ভবতঃ সে তোমার উপর গর্ব ও অহংকার প্রকাশ করবে। তুমি যেমন ঠিক তেমন সমমানের বন্ধু, সঙ্গী ও জীবন-সঙ্গিনী গ্রহণ করো, তাতে তোমার মন কোন প্রকার ব্যথিত হবে না।’
হাতি-ওয়ালার সাথে বন্ধুত্ব করলে হাতি রাখার মত ঘর নিজেকে বানাতে হবে। নতুবা ‘বড়র পিরীতি বালির বাঁধ, ক্ষণে হাতে দড়ি ক্ষণে চাঁদ।’
এ কথা ভাবা যায় যে, বড় বাড়িতে মেয়ে পড়লে তার খেতে-পরতে কোন কষ্ট হবে না; সুখে থাকবে। কিন্তু তার নিশ্চয়তা কোথায়? ‘বড় গাছের তলায় বাস, ডাল ভাঙ্গলেই সর্বনাশ।’
মেয়ের অভিভাবকের উচিৎ, মেয়ের রুচি ও পছন্দের খেয়াল রাখা। অবশ্য তার হাতে ডোর ছেড়ে দেওয়া উচিৎ নয়। পরন্তু দ্বীনের ডোর কোন সময়ই ছাড়ার নয়। কারণ, সাধারণতঃ মেয়েদের কল্পনায় থাকে,
‘রসের নাগর, রূপের সাগর, যদি ধন পাই,
আদর ক’রে করি তারে বাপের জামাই।’
বাস্! এই হল ভোগবাদিনী ও পরলোক সম্বন্ধে অন্ধ নারীদের আশা। এরা কেবল বাহ্যিক দৃষ্টির সৌন্দর্য পছন্দ ও কামনা করে; কিন্তু অন্তর্দৃষ্টির সৌন্দর্য অপ্রয়োজনীয় ভাবে! তারা জানে না যে, কুৎসিত মনের থেকে কুৎসিত মুখ অনেক ভালো।
অতএব এ কাজে অভিভাবককে তার মেয়ের সহায়ক হওয়া একান্ত ফরয। তাই তো মেয়ের বিবাহে অভিভাবক থাকার শর্তারোপ করা হয়েছে।
আবু অদাআহ বলেন, আমি সাঈদ বিন মুসাইয়েবের দর্সে বসতাম। কিছু দিন তিনি আমাকে দেখতে না পেয়ে যখন আমি তাঁর নিকট এলাম, তখন আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি ছিলে কোথায়?’ আমি বললাম, ‘আমার স্ত্রী মারা গেল; সেই নিয়ে কিছুদিন ব্যস্ত ছিলাম।’ তিনি বললেন, ‘আমাদেরকে খবর দাওনি কেন? তার জানাযা পড়তাম।’ তারপর উঠে চলে আসার ইচ্ছা করলে তিনি আমাকে বললেন, ‘দ্বিতীয় বিবাহ করলে না কেন?’ আমি বললাম, ‘আল্লাহ আপনাকে রহম করুন! কে আমাকে মেয়ে দেবে? আমি তো দুই কি তিন দিরহামের মালিক মাত্র।’ তিনি বললেন, ‘যদি আমি দিই, তবে তুমি করবে কি?’ আমি বললাম, ‘জী হ্যাঁ।’
সঙ্গে সঙ্গে খোৎবা পাঠ করে ২ কি ৩ দিরহাম মোহরের বিনিময়ে তাঁর মেয়ের সাথে আমার বিবাহ পড়িয়ে দিলেন। তারপর আমি উঠে এলাম। তখন খুশীতে আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ়। ঘরে এসে লাগলাম চিন্তা করতে; ঋণ করতে হবে, কার নিকট করি? মাগরিবের নামায পড়লাম। রোযায় ছিলাম সেদিন। ইফতার ক’রে রাতের খানা খেলাম। খানা ছিল রুটি ও তেল। ইত্যবসরে কে দরজায় আঘাত করল। আমি বললাম, ‘কে?’ আগন্তুক বলল, ‘আমি সাঈদ।’ ভাবলাম, তিনি কি সাঈদ বিন মুসাইয়েব? তাঁকে তো চল্লিশ বছর যাবৎ ঘর থেকে মসজিদ ছাড়া অন্য কোথাও যেতে দেখা যায়নি। উঠে দরজা খুলতেই দেখি উনিই। ধারণা করলাম, হয়তো বা মত পরিবর্তন হয়েছে। আমি বললাম, ‘আবু মুহাম্মাদ! আপনি নিজে এলেন! আমাকে ডেকে পাঠাতে পারতেন? আমি আপনার নিকট আসতাম।’ তিনি বললেন, ‘না। এর হকদার তুমি।’ আমি বললাম, ‘আদেশ করুন।’ তিনি বললেন, ‘ভাবলাম, বিপত্নীক পুরুষ তুমি; অথচ তোমার বিবাহ হল। তাই তুমি একাকী রাত কাটাও এটা অপছন্দ করলাম। এই নাও তোমার স্ত্রী!’
দেখলাম, সে তাঁর সোজাসুজি পশ্চাতে সলজ্জ দন্ডায়মানা। অতঃপর তিনি তাকে দরজা পার করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে প্রস্থান করলেন। লজ্জায় সে যেন দরজার সাথে মিশে গেল। আমি বাড়ির ছাদে চড়ে প্রতিবেশীর সকলকে হাঁক দিলাম। সকলেই বলল, ‘কি ব্যাপার?’ আমি বললাম, ‘সাঈদ তাঁর মেয়ের সঙ্গে আমার বিবাহ দিয়েছেন। হঠাৎ করে তিনি তাঁর মেয়েকে আমার ঘরে দিয়ে গেলেন। ঐ ওখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে।’
সকল মহিলা তাকে দেখতে এল।
আমার মায়ের কাছে খবর গেলে তিনি এসে বললেন, ‘তিন দিন না সাজানো পর্যন্ত যদি তুমি ওকে স্পর্শ করো, তবে আমার চেহারা দেখা তোমার জন্য হারাম।’ অতএব তিন দিন অপেক্ষার পর তার সাথে বাসর-শয্যায় মিলিত হলাম। দেখলাম সে অন্যতমা সুন্দরী, কুরআনের হাফেয, আল্লাহর রসূল (ﷺ) এর সুন্নাহ বিষয়ে সুবিজ্ঞা এবং স্বামীর অধিকার বিষয়ে সবজান্তা।
এরপর একমাস ওস্তাদ সাঈদের নিকট আমার যাওয়া-আসা ছিল না। অতঃপর একদিন তাঁর মসজিদে গিয়ে সালাম দিলে তিনি উত্তর দিলেন। কিন্তু কোন কথা বললেন না। তৎপর সমস্ত লোক যখন মসজিদ থেকে বের হয়ে গেল, তখন একা পেয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন। ‘ঐ লোকটার খবর কি?’ আমি বললাম, ‘তার খবর এমন; যা বন্ধুতে পছন্দ আর শত্রুতে অপছন্দ করবে।’ তিনি বললেন, ‘যদি তার কোন বিষয় তোমাকে সন্দিহান করে, তবে লাঠি ব্যবহার করো।’ অতঃপর বাড়ি ফিরে এলাম।
সাঈদের মেয়ে; যাকে খলীফা আব্দুল মালেক বিন মারওয়ান তাঁর ছেলে অলীদের জন্য পয়গাম দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি রাজপরিবারে মেয়ের বিবাহ দিতে অস্বীকার করেছিলেন। অবশেষে পছন্দ করলেন এক দ্বীনদার গরীবকে![13]
মুবারক আবু আব্দুল্লাহর ব্যাপারে কথিত আছে যে, তিনি তাঁর প্রভু (মনীব) এর বাগানে কাজ করতেন। তাঁর প্রভু বাগান-মালিক হামাযানের বড় ব্যবসায়ী ছিলেন। একদিন বাগানে এসে দাসকে বললেন, ‘মুবারক! একটি মিষ্টি বেদানা চাই।’
মুবারক গাছ হতে খুঁজে খুঁজে একটি বেদানা প্রভুর হাতে দিলেন। প্রভু তো ভেঙ্গে খেতেই চটে উঠলেন। বললেন, ‘তোমাকে মিষ্টি দেখে আনতে বললাম, অথচ টক বেছেই নিয়ে এলে? মিষ্টি দেখে নিয়ে এস।’
মুবারক অন্য একটি গাছ থেকে আর একটি বেদানা এনে দিলে তিনি খেয়ে দেখলেন সেটাও টক। রেগে তৃতীয়বার পাঠালে একই অবস্থা। প্রভু বললেন, ‘আরে তুমি টক আর মিষ্টি বেদানা কাকে বলে চেন না?’ বললেন, ‘জী না। আপনার অনুমতি না পেয়ে কি করে খেতাম?’
দাসের এই আমানতদারী ও সততা দেখে প্রভু অবাক হলেন। তাঁর চোখে তাঁর কদর ও মর্যাদা বৃদ্ধি পেল।
প্রভুর ছিল এক সুন্দরী কন্যা। বহু বড় বড় পরিবার থেকেই তার বিয়ের সম্বন্ধ আসছিল। একদা প্রভু মুবারককে ডেকে বললেন, ‘আমার মেয়ের সাথে কেমন লোকের বিয়ে হওয়া উচিৎ বল তো?’ মুবারক বললেন, ‘জাহেলিয়াত যুগের লোকেরা বংশ ও কুলমান দেখে বিয়ে দিত, ইয়াহুদীরা দেয় ধন দেখে, খ্রীষ্টানরা দেয় রূপ-সৌন্দর্য দেখে। কিন্তু এই উম্মত কেবল দ্বীন দেখেই বিয়ে দিয়ে থাকে।’
এ ধরনের জ্ঞানগর্ভ কথা প্রভুর বড় পছন্দ হল। মুবারকের কথা প্রভু তাঁর স্ত্রীর নিকট উল্লেখ করে বললেন, ‘আমি তো মেয়ের জন্য মুবারকের চেয়ে অধিক উপযুক্ত পাত্র আর কাউকে মনে করি না।’
হয়েও গেল বিবাহ। পিতা উভয়কে প্রচুর অর্থ দিয়ে তাঁদের দাম্পত্যে সাহায্য করলেন। এই সেই দম্পতি যাঁদের ঔরসে জন্ম নিয়েছিলেন প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস, যাহেদ, বীর মুজাহিদ আব্দুল্লাহ বিন মুবারক।[14]
এই ছিল মেয়ের বাবাদের তাদের মেয়েদের আখেরাত বানানোর প্রতি খেয়াল রেখে পাত্র পছন্দ করার পদ্ধতি। দুনিয়াদারীর প্রতি খেয়াল রেখে নয়।
এক ব্যক্তি হাসান বাসরী (রঃ) কে জিজ্ঞাসা করল, ‘আমার একটি মেয়ে আছে। বহু জায়গা হতে তার বিয়ের কথা আসছে। কাকে দেব বলতে পারেন?’
হাসান বললেন, ‘সেই পুরুষ দেখে মেয়ে দাও; যে আল্লাহকে ভয় করে (যে পরহেযগার)। এতে যদি সে তাকে ভালোবাসে, তাহলে তার যথার্থ কদর করবে। আর ভালো না বাসলে সে তার উপর অত্যাচার করবে না।’[15]
শুধু অভিভাবকই নয় বরং খোদ মেয়েদেরকেও এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া উচিৎ।
আবূ তালহা তখন ইসলাম গ্রহণ করেননি। তিনি উম্মে সুলাইমকে বিবাহের প্রস্তাব দিলে উম্মে সুলাইম বললেন, ‘আপনার মত যুবক স্বামী হওয়ার যোগ্য; রদ্যোগ্য নন। কিন্তু আপনি তো কাফের। আর আমি হলাম একজন মুসলিম নারী। তাই আমাদের মধ্যে বিবাহ শুদ্ধ নয়।’ আবূ তালহা ধন-দৌলতের লোভ দেখিয়ে বললেন, ‘তুমি কি সোনা-চাঁদি ও অর্থ পেয়ে খুশী হতে পারবে না?’
উম্মে সুলাইম বললেন, ‘আমি সোনা চাঁদি কিছুই চাই না। কিন্তু আপনি এমন মানুষ; যে শুনতে পায় না, দেখতে পায় না এবং কোন উপকার করতে পারে না এমন কোন হাবশী দাসের গড়া কাঠের (মূর্তি) পূজা করেন। এতে কি আপনার বিবেকে বাধে না? শুনুন, যদি আপনি মুসলমান হন, তাহলে আমি আপনাকে বিয়ে করব। আর ইসলাম হবে আমার মোহর! এ ছাড়া অন্য কিছু আমি মোহররূপে চাই না!’ [16]
উল্লেখ্য যে, আমার এক ছাত্রী মুখ খুলে কয়েকটি বিবাহ প্রস্তাব রদ্ করলে তাকে রাজী করাবার জন্য তার অভিভাবক আমাকে দায়িত্ব দেন। রদের কারণ জিজ্ঞাসা করলে সে আমাকে আদবের সাথে জানাল। ‘জী, ওরা মাযার পূজা করে।’ অন্য এক প্রস্তাবের জবাবে বলল, ‘আমি শুনেছি ওদের বাড়িতে টি-ভি আছে। আমার ভয় হয় যে, আমি খারাপ হয়ে যাব?!’
এরূপ দ্বীনদারী জবাব শুনে আমি অবাক না হয়ে এবং তাকে শত ধন্যবাদ ও দুআ না দিয়ে পারিনি।
সঊদী আরবের আল-মাজমাআহ শহরে এককালে আমি বিবাহ রেজিষ্ট্রীর মুহরী (লেখক) ছিলাম। এক বিবাহ মজলিসে পাত্রীর শর্ত লিখার সময় ১ম শর্ত ছিল, সে কলেজের অধ্যয়ন শেষ করবে। ২য় শর্ত ছিল, পাত্র সিগারেট খায়, তাকে সিগারেট খাওয়া ছাড়তে হবে!
উক্ত শর্ত পালনে বর সম্মত কি না, তা জানতে তাকে প্রশ্ন করা হলে সে বলল, ‘ছাড়ার চেষ্টা করব।’ কনের কাছে তা বলা হলে সে বলল, ‘চেষ্টা নয়; শর্তে লিখুন, আজ থেকেই ছাড়বে এবং যেদিন সে পুনরায় সিগারেট খাবে সেদিন আমার এক তালাক বলে গণ্য হবে!’
মজলিসে যে বাহবা ও দুআর শোর উঠেছিল তা বলাই বাহুল্য। পরিশেষে এই শর্তে বর স্বাক্ষর করেছিল। আমি নিজ হাতে সেই শর্ত লিখেছিলাম। আজ সমাজে দরকার আছে এমন গুণবতী কন্যার।
কিন্তু হায়! নারীর মূল্যমান কমে যাওয়ার ফলে এবং পণের চাপের মুখে বহু গুণবতী কনে অমত সত্ত্বেও অযোগ্য পাত্রের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে পারে না। করলে হয়তো অভিভাবকদের কথার জবালা সহ্য করাই দায় হয়ে উঠবে। পক্ষান্তরে পাত্রের দাড়ি আছে বলে অথবা মেলা-খেলায় নিয়ে যাবে না বলে পাত্র রদ্ করলে তখন অভিভাবকের কোন অসুবিধা হয় না। বরং ‘এখন ছোট মেয়ে, শক-আহ্লাদ থাকতে হবে বৈ কি’---বলে দ্বীনদার পাত্র ফিরিয়ে দিতে এতটুকু লজ্জাবোধ হয় না। অথচ দাবী করে, ‘তারা নাকি মুসলমান!’
সুতরাং দ্বীনদারী ও চরিত্র ব্যতীত আভিজাত্য, নাম করা বংশ, যশ, সম্পদ, পদ প্রভৃতি বিবেচনা করে বিবাহ দিলে বা করলে দাম্পত্য-সুখের সুনিশ্চিত আশা করা যায় না। প্রিয় নবী (ﷺ) বলেন,
إِذَا أَتَاكُمْ مَنْ تَرْضَوْنَ دِينَهُ وَخُلُقَهُ فَزَوِّجُوهُ، إِلا تَفْعَلُوا تَكُنْ فِتْنَةٌ فِي الأَرْضِ وَفَسَادٌ عَرِيضٌ.
‘‘তোমাদের নিকট যখন এমন ব্যক্তি (বিবাহের পয়গাম নিয়ে) আসে; যার দ্বীন ও চরিত্রে তোমরা মুগ্ধ তখন তার সাথে (মেয়ের) বিবাহ দাও। যদি তা না কর তাহলে পৃথিবীতে ফিৎনা ও মহাফাসাদ সৃষ্টি হয়ে যাবে।’’[17]
তিনি আরো বলেন,
مَنْ أَعْطَى لِلَّهِ تَعَالَى وَمَنَعَ لِلَّهِ تَعَالَى وَأَحَبَّ لِلَّهِ تَعَالَى وَأَبْغَضَ لِلَّهِ تَعَالَى وَأَنْكَحَ لِلَّهِ تَعَالَى فَقَدْ اسْتَكْمَلَ إِيمَانَهُ.
‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে কিছু দান করে, কিছু দেওয়া হতে বিরত থাকে, কাউকে ভালোবাসে অথবা ঘৃণাবাসে এবং তাঁরই সন্তুষ্টিলাভের কথা খেয়াল করে বিবাহ দেয়, তার ঈমান পূর্ণাঙ্গ ঈমান।’’[18]
অতএব দ্বীন ও চরিত্রেই পাত্র-পাত্রীর সমতা জরুরী। কারণ, সকল প্রকার বর্ণ-বৈষম্য, বন্ধন ও উচ্চতা-নিচুতার প্রাচীর চুরমার করে দেয় দ্বীন ও তাকওয়া।
কোন দ্বীনদার পর্দা-প্রেমী পাত্র-পাত্রীর জন্য ফাসেক বেপর্দা-প্রেমী পাত্র-পাত্রী হতে পারে না। কোন তেŠহীদবাদী পাত্র-পাত্রীর জন্য কোন বিদআতী বা মাযারী পাত্র-পাত্রী হতে পারে না। মিঠাপানির মাছের সাথে অনুরূপ মাছের বিবাহ শোভনীয় এবং নোনাপানির মাছের সাথে অনুরূপ মাছের বিবাহই মানানসই। নতুবা মিঠা পানির মাছের নোনা পানিতে এসে এবং নোনা পানির মাছের মিঠা পানিতে এসে বাস করা কঠিনই হবে। আর মানানসই তখনই হয়; যখন ‘য্যায়সন কা ত্যায়সন শুকটি কা ব্যায়গন’-এর ঘর পড়ে। এতে স্বামী-স্ত্রীর মান-অপমানের ব্যাপারটা সমান পর্যায়ে থাকে। নচেৎ এই অসমতার কারণেই কারো স্ত্রী প্রভু হয় অথবা দাসী। পক্ষান্তরে সমতার স্ত্রী হয় বন্ধু। গেঁয়ো পাত্র-পাত্রীর পক্ষে শহুরে, শিক্ষিতের পক্ষে অশিক্ষিত, দরিদ্রের পক্ষে ধনী পাত্র-পাত্রী খুব কমই সুখ আনতে পারে।
তদনুরূপ বেপর্দা পরিবেশের পাত্রী পর্দা পরিবেশে এলে তার দম বন্ধ হয়ে যায়! কারণ, জঙ্গলের পাখীকে সোনার খাঁচা দিলেও তার মন পড়ে থাকে জঙ্গলে। কেননা, সে পর্দার পরিবেশকে খাঁচাই মনে করে! তাই সে নিজেও এমন পরিবেশে শান্তি পায় না এবং ঈর্ষাবান স্বামীও তাকে নিয়ে অশান্তি ভোগ করে। বন থেকে বাঘ তুলে এনে তার যতই তরবিয়ত দেওয়া হোক এবং পোষ মানানো যাক না কেন, তবুও তার মন থেকে কিন্তু বন তুলে ফেলা যায় না। তাই সে সদা ফাঁক খোঁজে, ফাঁকি দিতে চেষ্টা করে; এমনকি ধোঁকাও দিয়ে বসে অনেক সময়।
অবশ্য এসব কিছু হয় দ্বীনদারী তরবিয়ত ঢিলে হওয়ার ফলেই। দ্বীন ও তাকওয়া থাকলে স্বামী-স্ত্রী কারোই অসুবিধা হয় না।
একটা বিষয় খেয়াল রাখার যে, কোন পাত্র বা পাত্রী সম্পর্কে জানতে তার দ্বীন বিষয়ে প্রথমে প্রশ্ন করা উচিৎ নয়। নচেৎ এরপর সৌন্দর্যাদি পছন্দ না হয়ে তাকে রদ্ করলে দ্বীনদার রদ্ করা হয় এবং তাতে মহানবী (ﷺ) এর বিরোধিতা হয়। অতএব কর্তৃপক্ষের উচিৎ যে, অন্যান্য বিষয়ে প্রথমে পছন্দ হয়ে শেষে দ্বীন বিষয়ে প্রশ্ন (অবশ্যই) করে দ্বীন থাকলে গ্রহণ করবে, নতুবা রদ্ করে দেবে; যখন শরীয়তের বিপরীত চলা হতে বেঁচে যাবে। কথায় বলে, ‘আগে দর্শন ধারি, শেষে গুণ বিচারি।’
প্রকাশ যে, পাত্রী পছন্দের জন্য জোড়া-ভ্রূ, কুপগাল ইত্যাদি শুভ-অশুভের কিছু লক্ষণ নয়।
পাত্র বা পাত্রপক্ষ পারিপাশির্বক অবস্থা, পরিবেশ ইত্যাদি দেখে ও জিজ্ঞাসাবাদ করে কোন পাত্রী পছন্দ হলে তার অভিভাবককে বিবাহের প্রস্তাব দেবে। তবে তার পূর্বে দেখা উচিৎ যে, সেই পাত্রী এই পাত্রের জন্য গম্যা কি না। অগম্যা বা অবৈধ হলে তাকে বিবাহ প্রস্তাব দেওয়া হারাম।
অনুরূপ যদি তার পূর্বে অন্য পাণিপ্রার্থী ঐ পাত্রীর জন্য প্রস্তাব দিয়ে থাকে, তাহলে সে জবাব না দেওয়া পর্যন্ত তার প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব বা (দর কষাকষি করে) প্রলোভন বৈধ নয়। অন্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করা এবং এতে বিদ্বেষ গড়ে তোলা মুসলিমের কাজ নয়।
প্রিয় নবী (ﷺ) বলেন,
الْمُؤْمِنُ أَخُو الْمُؤْمِنِ فَلاَ يَحِلُّ لِلْمُؤْمِنِ أَنْ يَبْتَاعَ عَلَى بَيْعِ أَخِيهِ وَلاَ يَخْطُبَ عَلَى خِطْبَةِ أَخِيهِ حَتَّى يَذَرَ.
‘‘এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সুতরাং তার জন্য তার ভায়ের ক্রয়-বিক্রয়ের উপর ক্রয়-বিক্রয় এবং বিবাহ-প্রস্তাবের উপর বিবাহ প্রস্তাব -তার ছেড়ে না দেওয়া পর্যন্ত - হালাল নয়।[19]
পাত্রী যদি কারো তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী হয়, তবে তার ইদ্দতে তাকে বিবাহ-পয়গাম দেওয়া হারাম। স্বামী-মৃত্যুর ইদ্দতে থাকলে স্পষ্টভাবে প্রস্তাব দেওয়া নিষিদ্ধ। ইঙ্গিতে দেওয়া চলে। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿وَلاَ جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا عَرَّضْتُمْ بِهِ مِنْ خِطْبَةِ النِّسَاءِ أَوْ أَكْنَنْتُمْ فِي أَنْفُسِكُمْ عَلِمَ اللهُ أَنَّكُمْ سَتَذْكُرُونَهُنَّ وَلَكِنْ لاَ تُوَاعِدُوهُنَّ سِرّاً إِلَّا أَنْ تَقُولُوا قَوْلاً مَعْرُوفاً وَلاَ تَعْزِمُوا عُقْدَةَ النِّكَاحِ حَتَّى يَبْلُغَ الْكِتَابُ أَجَلَهُ وَاعْلَمُوا أَنَّ الله يَعْلَمُ مَا فِي أَنْفُسِكُمْ فَاحْذَرُوهُ﴾
‘‘আর যদি তোমরা আভাসে-ইঙ্গিতে উক্ত রমণীদেরকে বিবাহ-প্রস্তাব দাও অথবা অন্তরে তা গোপন রাখ, তবে তাতে তোমাদের দোষ হবে না। আল্লাহ জানেন যে, তোমরা তাদের সম্বন্ধে আলোচনা করবে। কিন্তু বিধিমত কথাবার্তা ছাড়া গোপনে তাদের নিকট কোন অঙ্গীকার করো না। নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত বিবাহকার্য সম্পন্ন করার সংকল্প করো না এবং জেনে রাখ, আল্লাহ তোমাদের মনোভাব জানেন। অতএব তাঁকে ভয় কর।’’[20]
অনুরূপ হজ্জ বা উমরা করতে গিয়ে ইহরাম অবস্থায় কোন নারীকে বিবাহ প্রস্তাব দেওয়া অবৈধ।[21]
বিবাহের পূর্বে পাত্র-পাত্রীর রক্ত, বীর্য প্রভৃতি পরীক্ষা করে তারা রোগমুক্ত কি না তা দেখে নেওয়ার সমর্থন রয়েছে ইসলামে। প্রিয় নবী (ﷺ) বলেন, ‘‘তোমরা কুষ্ঠরোগ হতে দূরে থেকো; যেমন বাঘ হতে দূরে পলায়ন কর।’’[22]
‘‘চর্মরোগাক্রান্ত উটের মালিক যেন সুস্থ উট দলে তার উট না নিয়ে যায়।’’[23]
‘‘কারো জন্য অপরের কোন প্রকার ক্ষতি করা বৈধ নয়। কোন দু’জনের জন্য প্রতিশোধমূলক পরস্পরকে ক্ষতিগ্রস্ত করাও বৈধ নয়।’’[24]
[2] (ইবনে মাজাহ ১৮৫৬নং, আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ২১৭৬নং)
[3] (নাসাঈ ৩২৩১নং, হাকেম ২/১৬১, মুসনাদে আহমদ ২/২৫১)
[4] (সূরা আন-নিসা (৪) : ৩৪)
[5] (আবু দাঊদ, নাসাঈ, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩০৯১নং)
[6] (সিলসিলা সহীহাহ ১৬২৬নং)
[7] (বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩০৮৮নং)
[8] (ইবনে মাজাহ, আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ৬২৩নং, সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৪০৫৩নং)
[9] (বুখারী ২৯৬৭নং)
[10] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ১৮/১১৯)
[11] (সূরা আল-হুজুরাত (৪৯) : ১৩)
[12] (তুহফাতুল আরূস, ৪৯পৃঃ)
[13] (অফিয়াতুল আ’ইয়ান ২/৩৭৭)
[14] (অফায়াতুল আ’ইয়ান, ইবনে খাল্লেকান ২/২৩৮)
[15] (উয়ূনুল আখবার, ইবনে কুতাইবাহ ৪/১৭)
[16] (তুহফাতুল আরূস, ৫২-৫৩পৃঃ)
[17] (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ১০২২নং)
[18] (মুসনাদে আহমদ, হাকেম , বাইহাকী, সহীহ তিরমিযী, আল্লামা আলবানী ২০৪৬ নং)
[19] (বুখারী, মুসলিম ১৪১৪নং)
[20] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ২৩৫)
[21] (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৭৮০৯নং)
[22] (বুখারী ৫৭৯৭নং)
[23] (বুখারী ৫৭৭১নং)
[24] (মুসনাদে আহমদ, মাঃ, ইবনে মাজাহ ২৩৪০, ২৩৪১ নং)
পাত্রী সৌন্দর্যে যতই প্রসিদ্ধ হোক তবুও তাকে বিবাহের পূর্বে এক ঝলক দেখে নেওয়া উত্তম। ঘটকের চটকদার কথায় সম্পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা না রেখে জীবন-সঙ্গিনীকে জীবন তরীতে চড়াবার পূর্বে সবচক্ষে যাচাই করে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। এতে বিবাহের পর স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বন্ধনে মধুরতা আসে, অধিক ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। একে অপরকে দোষারোপ করা থেকে বাঁচা যায় এবং বিবাহের পর পস্তাতে হয় না।
পাত্রী দেখতে গিয়ে পাত্র যা দেখবে তা হল, পাত্রীর কেবল চেহারা ও কব্জি পর্যন্ত হস্তদ্বয়। অন্যান্য অঙ্গ দেখা বা দেখানো বৈধ নয়। কারণ, এমনিতে কোন গম্য নারীর প্রতি দৃক্পাত করাই অবৈধ। তাই প্রয়োজনে যা বৈধ, তা হল পাত্রীর ঐ দুই অঙ্গ।
এই দর্শনের সময় পাত্রীর সাথে যেন তার বাপ বা ভাই বা কোন মাহরাম থাকে। তাকে পাত্রের সাথে একাকিনী কোন রুমে ছেড়ে দেওয়া বৈধ নয়। যদিও বিয়ের কথা পাক্কা হয়।
পাত্র যেন পাত্রীর প্রতি কামনজরে না দেখে।[1] আর দর্শনের সময় তাকে বিবাহ করার যেন পাক্কা ইরাদা থাকে।
পাত্রীকে পরিচয় জিজ্ঞাসা বৈধ। তবে লম্বা সময় ধরে বসিয়ে রাখা বৈধ নয় এবং বারবার বহুবার অথবা অনিমেষনেত্রে দীর্ঘক্ষণ তার প্রতি দৃষ্টি রাখাও অবৈধ। অনুরূপ একবার দেখার পর পুনরায় দেখা বা দেখতে চাওয়া বৈধ নয়।[2]
পাত্রীর সাথে মুসাফাহা করা, রসালাপ ও রহস্য করাও অবৈধ। কিছুক্ষণ তাদের মাঝে হৃদয়ের আদান-প্রদান হোক, এই বলে সুযোগ দেওয়া অভিভাবকের জন্য হারাম।
এই সময় পাত্রীর মন বড় করার জন্য কিছু উপহার দেওয়া উত্তম। কারণ,
‘‘স্মৃতি দিয়ে বাঁধা থাকে প্রীতি, প্রীতি দিয়ে বাঁধা থাকে মন,
উপহারে বাঁধা থাকে স্মৃতি, তাই দেওয়া প্রয়োজন।’’
অবশ্য পাত্রীর গলে নিজে হার পরানো বা হাত ধরে ঘড়ি অথবা আংটি পরানো হারাম। পরন্তু পয়গামের আংটি বলে কিছু নেই। এমন অঙ্গুরীয়কে শুভাশুভ কিছু ধারণা করা বিদআত ও শির্ক। যা পাশ্চাত্য-সভ্যতার রীতি।[3]
এরপর পছন্দ-অপছন্দের কথা ভাবনা-চিন্তা করে পরে জানাবে।
অনুষ্ঠান করে ক্ষণেকের দেখায় পাত্রী আচমকা সুন্দরী মনে হতে পারে অথবা প্রসাধন ও সাজসজ্জায় ধোঁকাও হতে পারে। তাই যদি কেউ বিবাহ করার পাক্কা নিয়তে নিজ পাত্রীকে তার ও তার অভিভাবকের অজান্তে গোপনে থেকে লুকিয়ে দেখে, তাহলে তাও বৈধ। তবে এমন স্থান থেকে লুকিয়ে দেখা বৈধ নয়, যেখানে সে তার একান্ত গোপনীয় অঙ্গ প্রকাশ করতে পারে। অতএব স্কুলের পথে বা কোন আত্মীয়র বাড়িতে থেকেও দেখা যায়।
প্রিয় নবী (ﷺ) বলেন,
إِذَا خَطَبَ أَحَدُكُمْ امْرَأَةً فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ أَنْ يَنْظُرَ إِلَيْهَا إِذَا كَانَ إِنَّمَا يَنْظُرُ إِلَيْهَا لِخِطْبَتِهِ وَإِنْ كَانَتْ لَا تَعْلَمُ.
‘‘যখন তোমাদের কেউ কোন রমণীকে বিবাহ প্রস্তাব দেয়, তখন যদি প্রস্তাবের জন্যই তাকে দেখে, তবে তা দূষণীয় নয়; যদিও ঐ রমণী তা জানতে না পারে।’’[4]
সাহাবী জাবের বিন আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমি এক তরুণীকে বিবাহের প্রস্তাব দিলে তাকে দেখার জন্য লুকিয়ে থাকতাম। শেষ পর্যন্ত আমি তার সেই সৌন্দর্য দেখলাম যা আমাকে বিবাহ করতে উৎসাহিত করল। অতঃপর আমি তাকে বিবাহ করলাম।[5]
পাত্রী দেখার সময় কালো কলপে যুবক সেজে তাকে ধোঁকা দেওয়া হারাম। যেমন পাত্রীপক্ষের জন্য হারাম, একজনকে দেখিয়ে অপরজনের সাথে পাত্রের বিয়ে দেওয়া। প্রিয় নবী (ﷺ) বলেন,
لَيْسَ مِنَّا مَنْ غَشَّ.
‘‘যে (কাউকে) ধোঁকা দেয়, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’’ (ইর ১৩১৯নং)
পক্ষান্তরে একজনের সাথে বিবাহের কথাবার্তা হয়ে বিবাহ-বন্ধনের সময় অন্যের সাথে ধোঁকা দিয়ে বিয়ে দিলে সে বিবাহ শুদ্ধ নয়। এমন করলে মেয়েকে ব্যভিচার করতে দেওয়া হবে।[6]
পাত্রের বাড়ির যে কোন মহিলা বউ দেখতে পারে। তবে পাত্র ছাড়া কোন অন্য পুরুষ দেখতে পারে না; পাত্রের বাপ-চাচাও নয়। সুতরাং বুনাই বা বন্ধু সহ পাত্রের পাত্রী দেখা ঈর্ষাহীনতা ও দ্বীন-বিরোধিতা। পাত্রী ও পাত্রীপক্ষের উচিৎ, একমাত্র পাত্র ছাড়া অন্য কোন পুরুষকে পাত্রীর চেহারা না দেখানো। নচেৎ এতে সকলেই সমান গোনাহগার হবে। কিন্তু যে নারীকে না চাইলেও দেখা যায়, সে (টোঁ-টোঁ কোম্পানী) নারী ও তার অভিভাবকের অবস্থা কি তা অনুমেয়।
পাত্রী দেখার আগে অথবা পরে বাড়ির লোককে দেখানোর জন্য পাত্রীর ফটো বা ছবি নেওয়া এবং পাত্রীপক্ষের তা দেওয়া ইসলামে নিষিদ্ধ। বিশেষ করে বিবাহ না হলে সে ছবি রয়ে যাবে এ বেগানার কাছে। তাছাড়া ঈর্ষাহীন পুরুষ হলে সেই ছবি তার বন্ধু-বান্ধব ও অন্যান্য পুরুষ তৃপ্তির সাথে দর্শন করবে। যাতে পাত্রী ও তার অভিভাবকের লজ্জা হওয়া উচিৎ।
অবশ্য প্রগতিশীল (দুর্গতিশীল) অভিভাবকের কাছে এসব ধর্মীয় বাণী হাস্যকর। কিন্তু আল্লাহর আযাব তার জন্য ভয়ংকর।
﴿فَلْيَحْذَرِ الَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَنْ تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ﴾
‘‘সুতরাং যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় অথবা কঠিন শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করবে।’’[7]
পক্ষান্তরে পাত্রীকে সরাসরি না দেখে তার ছবি দেখে পছন্দ সঠিক নাও হতে পারে। কারণ, ছবিতে সৌন্দর্য বর্ধন এবং ত্রুটি গোপন করা যায় সে কথা হয়তো প্রায় সকলেই জানে।
পাত্রীরও পছন্দ-অপছন্দের অধিকার আছে। সুতরাং পাত্রকে ঐ সময় দেখে নেবে। (বিবাহের দিন বিবাহবন্ধনের পূর্বে বাড়িতে দেখায় বিশেষ লাভ হয় না।) তার পছন্দ না হলে সেও রদ্ করতে পারে।[8]
বিশেষ করে অপাত্র, বিদআতী, মাযারী, বেনামাযী, ফাসেক, ধূমপায়ী, মদ্যপায়ী, বদমেজাজী প্রভৃতি দেখে ও শুনে তাকে বিয়ে করতে রাজী না হওয়াই ওয়াজেব। কিন্তু হায়! সে সুপাত্র আর ক’জন সুশীলার ভাগ্যে জোটে। আর সে সুশীলাই বা আছে ক’জন? পক্ষান্তরে দ্বীন ও চরিত্রের অনুকূল কোন বিষয় অপছন্দ করে অমত প্রকাশ করা আধুনিকাদের নতুন ফ্যাশান। তাই তো কেউ পাত্র অপছন্দ করে এই জন্যে যে, পাত্রের দাড়ি আছে! অথবা বোরকা পরতে হবে। বাইরে যেতে পাবে না! সিনেমা ও মেলা-খেলা দেখতে পাবে না। পাত্র প্যান্ট্ পরে না, পাত্রের হিপ্পি নেই, সোজা টাইপের তাই -যদিও সে খোজা নয়! তাই তো যুবকরা আল্লাহ ও তদীয় রসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে তাদের প্রিয়তমা ও প্রণয়িনীদের একান্ত অনুগত হতে শুরু করেছে। নচেৎ হয়তো বিয়েই হবে না অথবা প্রেয়সীর মনসঙ্গ পাবে না! পণের গরম বাজারেও এরূপ উদাহরণ যথেষ্ট পরিদৃষ্ট হয়! কানা বেগুনের ডোগলা খদ্দেরের অভাব নেই কোথাও! বরং এই বেগুন ও তার খদ্দের দিয়েই হাটের প্রায় সমস্ত স্থান পূর্ণ। সুতরাং আল্লাহর পানাহ।
একশ্রেণীর সভ্য (?) মানুষ যারা বউ দেখতে গিয়ে দ্বীন বিষয়ে কোন প্রশ্ন করে না। ‘নামায পড়ে কি না, কুরআন পড়তে জানে কি না’--এসব বিষয় জানার কোন প্রয়োজনই মনে করে না। পক্ষান্তরে নাচ-গান জানে কি না, সেতারা-বেহালা বাজাতে পারে কি না---সে সব বিষয়ে প্রধান প্রশ্ন থাকে! আহা! পাঁচজনকে খোশ করতে পারলে তবেই তো বউ নিয়ে গর্ব হবে! এই শ্রেণীর মানুষ সভ্য (?) হতে পারে, কিন্তু প্রকৃত ‘মুসলিম’ নয়।
পাত্রী পছন্দ না হলে পাত্র বা পাত্রপক্ষ ইঙ্গিতে জানিয়ে দেবে যে, এ বিয়ে গড়া তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। স্পষ্টরূপে পাত্রীর কোন দোষ-ত্রুটি তার অভিভাবক বা অন্য লোকের সামনে বর্ণনা করবে না। যে উপহার দিয়ে পাত্রীর মুখ দেখেছিল তা আর ফেরৎ নেওয়া বৈধ নয়, উচিৎও নয়। তবে বিয়ে হবেই মনে করে যদি অগ্রিম কিছু মোহরানা (ব’লে উল্লেখ করে) দিয়ে থাকে তবে তা ফেরৎ নেওয়া বৈধ এবং পাত্রীপক্ষের তা ফেরৎ দেওয়া কর্তব্য।[9]
পরন্তু সামান্য ত্রুটির কারণে বিবাহে জবাব দিয়ে অঙ্গীকার ভঙ্গ করা বৈধ নয়। কারণ অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে তা ভঙ্গ করা মুনাফিকের লক্ষণ।[10]
যেমন কোন ‘থার্ড পার্টি’র কথায় কান দিয়ে অথবা কোন হিংসুকের কান-ভাঙ্গানি শুনে বিয়ে ভেঙ্গে পাত্রীর মন ভাঙ্গা উচিৎ নয়।
অনুরূপ মনে পছন্দ হলেও ‘পণে’ পছন্দ না হয়ে পাত্রীর কোন খুঁত বের করে বিয়েতে জবাব দেওয়া নির্ঘাত ডবল অন্যায়। নও-সম্বন্ধের ভোজের ডালে লবণ কম হয়েছিল বলে ‘ওরা মানুষের মান জানে না’ দুর্নাম দিয়ে দ্বীনদার পাত্রী রদ্ করাও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। পেটুকের মত খেয়ে বেড়ানো অভ্যাস হলে, বিয়ের পাক্কা ইরাদা না নিয়ে (যে মেয়ে হারাম সে) পাত্রী দেখে বেড়ালে, নিশ্চয় তা সচ্চরিত্রবান মানুষের রীতি নয়।
বৈবাহিক সম্পর্ক কায়েম করার ব্যাপারে কোন দ্বীনদার মানুষ যদি কারো কাছে পরামর্শ নেয় তবে পাত্র বা পাত্রীর দোষ-গুণ খুলে বলা অবশ্যই উচিৎ।[11] যেহেতু মুসলিম ভাই যদি তার সমক্ষে, তার জানতে-শুনতে কোন বেদ্বীন বা বিদআতী ও নোংরা পরিবেশে প্রেমসূত্র স্থাপন করে বিপদে পড়ে তবে নিশ্চয় এর দায়িত্ব সে বহন করবে। যেহেতু সঠিক পরামর্শ দেওয়া এক আমানত। অবশ্য অহেতুক নিছক কোন ব্যক্তিগত স্বার্থে বা হিংসায় অতিরঞ্জন করে বা যা নয় তা বলে বিয়ে ভাঙ্গানোও মহাপাপ। তাছাড়া পরহিতৈষিতা দ্বীনের এক প্রধান লক্ষ্য।[12] এ লক্ষ্যে পৌঁছনো সকল মুসলিমের কর্তব্য।
পরন্তু ‘‘যে ব্যক্তি কোন মুসলিম ভায়ের কোন বিপদ বা কষ্ট দূর করে আল্লাহ কিয়ামতে তার বিপদ ও কষ্ট দূর করবেন।’’[13] কন্যাদায় আমাদের দেশের বর্তমান সমাজে এক চরম বিপদ। এ বিপদেও মুসলিম ভাইকে সাহায্য করা মুসলিমের কর্তব্য। অর্থ, সুপরামর্শ ও সুপাত্রের সন্ধান দিয়ে উপকার, বড় উপকার। অবশ্য এমন উপকারে নিজের ক্ষতি এবং বদনামও হতে পারে। কারণ, পাত্র দেখে দিয়ে মেয়ের সুখ হলে তার মা-বাবা বলবে, ‘আল্লাহ দিয়েছে।’ পক্ষান্তরে দুখ বা জবালা-জবলন হলে বলবে, ‘অমুক দিলে বা বিপদে ফেললে।’ অথচ সুখ-দুঃখ উভয়ই আল্লাহরই দান; ভাগ্যের ব্যাপার। তাছাড়া জেনে-শুনে কেউ কষ্টে ফেলে দেয় না। কিন্তু অবুঝ মানুষ অনিচ্ছাকৃত এসব বিষয়ে উপকারীকেও অপকারীরূপে দোষারোপ করে থাকে; যা নির্ঘাত অন্যায়। আর এ অন্যায়ে সবর করায় উপকারীর অতিরিক্ত সওয়াব লাভ হয়।
দ্বীনদার সুপাত্র পেলে অভিভাবকের উচিৎ বিলম্ব না করা। বাড়িতে নিজেদের খিদমত নেওয়ার উদ্দেশ্যে, আরো উঁচু শিক্ষিতা করার উদ্দেশ্যে (যেহেতু বিয়ের পরও পড়তে পারে) অথবা তার চাকুরির অর্থ খাওয়ার স্বার্থে অথবা গাফলতির কারণে মেয়ে বা বোনের বিয়ে পিছিয়ে দেওয়া বা ‘দিচ্ছি-দিব’ করা তার জন্য বৈধ নয়।[14]
প্রিয় নবী (ﷺ) বলেন, ‘‘তোমাদের নিকট যদি এমন ব্যক্তি (বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে) আসে যার দ্বীন ও চরিত্রে তোমরা সন্তুষ্ট তবে তার (সাথে কন্যার) বিবাহ দাও। যদি তা না কর তবে পৃথিবীতে ফিৎনা ও বড় ফাসাদ সৃষ্টি হয়ে যাবে।’’[15] তখন ঐ মেয়ের পদস্খলন ঘটলে কোর্টকাছারি বা দাঙ্গা-কলহও হতে পারে।
প্রকাশ যে, যুবতীর বয়স হলে উপযুক্ত মোহর, সুপাত্র ও দ্বীনদার বর থাকা সত্ত্বেও অভিভাবক নিজস্ব স্বার্থের খাতিরে অন্যায়ভাবে তার বিবাহে বাধা দিলে সে নিজে কাজীর নিকট অভিযোগ করে বিবাহ করতে পারে।[16] নচেৎ কেবলমাত্র কারো প্রেমে পড়ে, কোন অপাত্রের সাথে অবৈধ প্রণয়ে ফেঁসে বের হয়ে গিয়ে কোর্টে ‘লাভ ম্যারেজ’ করা এবং অভিভাবককে জানতেও না দেওয়া অথবা তার অনুমতি না নিয়ে বিবাহ করা হারাম ও বাতিল। সাধারণতঃ ব্যভিচারিণীরাই এরূপ বিবাহ করে চিরজীবন ব্যভিচার করে থাকে।[17]
পরন্তু প্রেম হল ধূপের মত; যাতে সুবাসের আমেজ থাকলেও তার সূত্রপাত হয় জবলন্ত আগুন দিয়ে, আর শেষ পরিণতি হয় ছাই দিয়ে। তাই প্রেমে পড়ে আগা-পিছা চিন্তা না করে স্বামী বা স্ত্রী নির্বাচন করায় ঠকতে হয় অধিকাংশে।
ছেলের বয়স হলেও সত্বর বিবাহ দেওয়া অভিভাবকের কর্তব্য। ছেলেকে ছোট ভেবে অবজ্ঞা করা উচিৎ নয়। ছেলে ‘বিয়ে করব না’ বললেও তারা কর্তব্যে পিছপা হবে না। কারণ, ‘‘পুরুষের একটা বয়স আছে; যখন নারী-নেশা গোপনে মনকে পেয়ে বসে। অবস্থার চাপে সে বিয়ে করবে না বললেও, সত্যি সত্যি ‘না’ করলেও ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নারী-সান্নিধ্যের কথা পরের মুখ দিয়ে শুনতেও মন্দ লাগে না। মন বলে, ‘চাই চাই’, মুখ বলে, ‘চাইনে।’’ অবস্থা এই হলে তার বন্ধু-বান্ধবের নিকট থেকেও সে রহস্য উদ্ঘাটিত হতে পারে। সুতরাং অভিভাবক সতর্ক হলে পাপ থেকে রেহাই পেয়ে যাবে।
পক্ষান্তরে অভিভাবক যদি যুবককে বিয়েতে বাধা দেয় অথবা দ্বীনদার সুপাত্রীকে বিয়ে করতে না দিয়ে তার কোন আত্মীয় অপাত্রীকে বউ করে আনতে চায় অথবা পণে পছন্দ না হয়ে বিয়েতে অস্বাভাবিক বিলম্ব করেই যায় তবে সে ক্ষেত্রে মা-বাপের অবাধ্য হওয়া পাপ নয়। ব্যভিচারের ভয় হলে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বাধ্য হওয়াই মুসলিম যুবকের উচিৎ।
তবে নিছক কারো প্রেমে পড়ে সুপাত্রী দ্বীনদার যুবতী ছেড়ে মা-বাপের কথা না মেনে নিজের ইচ্ছামত অপাত্রী বিবাহ করা বা ‘লাভ ম্যারেজ’ করায় পিতামাতার তথা আল্লাহ ও রসূলের অবাধ্যতা হয়। আল্লাহ যাতে রাজী, তাতে মা-বাপ বা সাতগুষ্ঠি রাজী না হলেও কোন ক্ষতি হয় না। পক্ষান্তরে যাতে আল্লাহ রাজী নন, তাতে মা-বাপ ও চৌদ্দগুষ্ঠিকে রাজী করা যুবকের আত্মীয় ও মাতৃপিতৃভক্তি নয় বরং প্রবৃত্তি ও আত্মতৃপ্তির পরিচয়।
কোন পাত্রের ব্যাপারে পাত্রী বা পাত্রীপক্ষের অথবা কোন পাত্রীর ব্যাপারে পাত্র বা পাত্রপক্ষের সন্দেহ হলে এবং সম্পর্ক গড়তে সংশয় ও দ্বিধা হলে ইস্তিখারা করলে ফল লাভ হয়। আল্লাহ তাঁর দ্বীনদার বান্দা-বান্দীকে সঠিক পথ নির্দেশ করেন।[18]
সুপাত্রে কন্যা পড়লে সত্যিই সৌভাগ্যের বিষয়। ‘দশ পুত্রসম কন্যা; যদি সুপাত্রে পড়ে।’
পাত্র-পাত্রী পছন্দ এবং বাগদানের পর তাদের আপোসের মধ্যে আসা-যাওয়া, পত্রালাপ, টেলিফোনে দূরালাপ, একান্তে ভ্রমণ, একে অপরকে বিশেষভাবে পরীক্ষা করার জন্য অবাধ মিলামিশা, কোর্ট্শিপ বা ইউরোপীয় প্রথায় তাদের আপোসের মধ্যে মন দেওয়া-নেওয়া প্রভৃতি ইসলামে বৈধ নয়। ‘বিয়ে তো হবেই’ মনে ক’রে বিবাহ-বন্ধনের পূর্বে বাগদত্তার সাথে স্ত্রীরূপ ব্যবহার, নির্জনতা অবলম্বন, একাকী কুরআন শিক্ষা দেওয়া প্রভৃতিও হারাম।[19] অবশ্য বিবাহ আক্দ সম্পন্ন হয়ে থাকলে তার সাথে (সারার পূর্বেও) স্ত্রীর মত ব্যবহার করতে এবং কুরআন ও দ্বীন শিক্ষা ইত্যাদি দিতে পারে। সমাজে তা নিন্দনীয় হলেও শরীয়তে নিন্দনীয় নয়।[20]
বিবাহের পূর্বে ভালোরূপে ভেবে নিনঃ-
আপনি কি ভালোবাসার মর্মার্থ জানেন? কেবল যৌন-সুখ লুটাই প্রকৃত সুখ নয়---তা জানেন তো? আপনি কি আপনার তাকে সুখী ও খুশী করতে পারবেন?
আপনি তাকে চিরদিনের জন্য নিজের অর্ধেক অঙ্গ মনে করতে পারবেন? আপনার স্বাস্থ্যরক্ষার চেয়ে দাম্পত্য-সুখ রক্ষা করতে কি অধিক সচেষ্ট হতে পারবেন?
আপনাদের উভয়ের মাঝে কোন ভুল বুঝাবুঝির সময় সন্ধির উদ্দেশ্যে একটুও নমনীয়তা স্বীকার করতে পারবেন তো? বিবাহ আপনার বহু স্বাধীনতা হরণ করে নেবে, সে কথা জানেন তো? দাম্পত্য কেবল কয়েক দিনের সফর নয় তা জানেন তো?
বলা বাহুল্য, বিবাহ কোন মজার খেলা নয়। বিবাহ কাঁধের জোঁয়াল। বিবাহ একটি অনুষ্ঠানের নাম, যাতে কনের আঙ্গুলে আংটি এবং বরের নাকে লাগাম পরানো হয়। স্ত্রীর গলায় হার এবং স্বামীর গলায় বেড়ি পরানো হয়। বিবাহ ‘দিল্লী কা লাড্ডু; (হাওয়া-মিঠাই) যো খায়েগা ওহ ভী পছতায়েগা, আওর যো নেহীঁ খায়েগা ওহ ভী পছতায়েগা!
[2] (দলীলুত্ব ত্বালিব, ফী হুক্মি নযরিল খাত্বিব, মুসাইদ আল-ফালিহ২৮পৃঃ)
[3] (আফরাহুনা, অজ্ঞাতদ ১০ পৃঃ, আজিঃ ২১২পৃঃ)
[4] (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ৯৭নং)
[5] (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ৯৯নং)
[6] (হাশিয়াতু রওযিল মুরাববা’ ৬/২৫৪)
[7] (সূরা আন-নিসা (২৪) : ৬৩)
[8] (দলীলুত্ব ত্বালিব, ফী হুক্মি নাযারিল খাত্বিব,৩৫পৃঃ)
[9] (ই’লামুল মুআক্কিঈন ২/৫০)
[10] (মিশকাতুল মাসাবীহ ৫৬নং)
[11] (মিশকাতুল মাসাবীহ৩৩২৪)
[12] (মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৪৯৬৬নং)
[13] (মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ২০৪নং)
[14] (আর-রাসাইলু অল ফাতাওয়ান নিসাইয়্যাহ, ইবনে বায ৫৫পৃঃ, ইসলাম মেঁ হালাল অ হারামঃ ২৩৬পৃঃ)
[15] (তিরমিযী, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩০৯০নং)
[16] (ফিকহুস সুন্নাহ, সাইয়েদ সাবেক ২/১২৮)
[17] (আবু দাঊদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমদ, ইরঃ ১৮৪০নং, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩১৩১নং)
[18] (সহীহ নাসাঈ, আল্লামা আলবানী ৩০৫০নং)
[19] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ২৬/১৩৬)
[20] (ফাতাওয়া উসাইমীনঃ২/৭৪৮)
কোন মন্তব্য নেই