১৭ আল-ওয়াহ্হাব
১৭ আল-ওয়াহ্হাব
অর্থঃ সবকিছু দানকারী, দানশীল, স্থাপনাকারী
- The One who is Generous in giving plenty without any return.
- The Donor, the Bestower
আল-ওয়াহহাব (দানশীল, স্থাপনাকারী)
ইবনুল কাইয়্যিম রহ. বলেছেন, আল্লাহর নামসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো, আল-বার (কল্যাণকারী), আল-ওয়াহহাব (দানশীল, স্থাপনাকারী), আল-কারীম (দয়ালু) যিনি সমস্ত সৃষ্টিকে তার কল্যাণ, দান ও দয়ায় বেষ্টন করে রাখেন। তিনি উত্তম মাওলা (অভিভাবক), সর্বদা দানশীল এবং প্রশস্ত দানকারী। আল্লাহর আল-বার (কল্যাণকারী) গুণবাচক নামটি ও এর প্রভাব তাঁর সমস্ত সৃষ্টির উপর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য উভয় ভাবেই প্রযোজ্য। কোন সৃষ্টিই তাঁর ইহসান, দয়া ও দান থেকে সামান্য সময়ের জন্যও মুখাপেক্ষীহীন নয়; বরং সর্বদা তাঁর দানের মুখাপেক্ষী। এ গুণ বাচক নামটি তাঁর ব্যাপক রহমত ও দানের উপর প্রমাণ করে যা তিনি সব সৃষ্টিকে তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী দান করে থাকেন। তাঁর দয়া দু’ধরনের। এক প্রকারের দয়া হলো আম তথা সকলের জন্য ব্যাপক। আর আরেক ধরণের দয়া হলো খাস তথা তাঁর নির্দিষ্ট বান্দা ও সৃষ্টির জন্য প্রযোজ্য। আল্লাহ তা‘আলার সর্বসাধারণের জন্য রহমত সম্পর্কে তিনি বলেছেন,
﴿رَبَّنَا وَسِعۡتَ كُلَّ شَيۡءٖ رَّحۡمَةٗ وَعِلۡمٗا٧﴾ [غافر: ٧]
“হে আমাদের রব, আপনি রহমত ও জ্ঞান দ্বারা সব কিছুকে পরিব্যপ্ত করে রয়েছেন।” [সূরা গাফের, আয়াত: ৭]
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَرَحۡمَتِي وَسِعَتۡ كُلَّ شَيۡءٖ١٥٦﴾ [الاعراف: ١٥٥]
“আর আমার রহমত সব বস্তুকে পরিব্যাপ্ত করেছে।” [সূরা আল-আ’রাফ, আয়াত: ১৫৫]
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَمَا بِكُم مِّن نِّعۡمَةٖ فَمِنَ ٱللَّهِ٥٣﴾ [النحل: ٥٣]
“আর তোমাদের কাছ যে সব নি‘আমত আছে, তা আল্লাহর পক্ষ থেকে।” [সূরা আন-নাহাল, আয়াত: ৫৩]
আল্লাহর এ প্রকারের রহমত ও দয়ায় সৎ, অসৎ, আসমানের অধিবাসী ও জমিনের অধিবাসী, শরী‘আতের মুকাল্লাফ ও গাইরে মুকাল্লাফ সকলকেই অন্তর্ভুক্ত করে।
আর আল্লাহর খাস তথা বিশেষ রহমত ও নি‘আমত শুধু মুত্তাকীনদের জন্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿فَسَأَكۡتُبُهَا لِلَّذِينَ يَتَّقُونَ وَيُؤۡتُونَ ٱلزَّكَوٰةَ وَٱلَّذِينَ هُم بَِٔايَٰتِنَا يُؤۡمِنُونَ١٥٦ ٱلَّذِينَ يَتَّبِعُونَ ٱلرَّسُولَ ٱلنَّبِيَّ ٱلۡأُمِّيَّ١٥٧﴾ [الاعراف: ١٥٥، ١٥٦]
“সুতরাং আমি তা লিখে দেব তাদের জন্য যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যাকাত প্রদান করে। আর যারা আমার আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান আনে। যারা অনুসরণ করে রাসূলের, যে উম্মী নবী..।” [সূরা আল-আ’রাফ, আয়াত: ১৫৫-১৫৬]
﴿إِنَّ رَحۡمَتَ ٱللَّهِ قَرِيبٞ مِّنَ ٱلۡمُحۡسِنِينَ٥٦﴾ [الاعراف: ٥٥]
“নিশ্চয় আল্লাহর রহমত সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী।” [সূরা আল-আ’রাফ, আয়াত: ৫৫]
সুলাইমান আলাইহিস সালাম তাঁর দো‘আয় বলেছেন,
﴿وَأَدۡخِلۡنِي بِرَحۡمَتِكَ فِي عِبَادِكَ ٱلصَّٰلِحِينَ١٩﴾ [النمل : ١٩]
“আর তোমার অনুগ্রহে তুমি আমাকে তোমার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত কর।” [সূরা আন-নামাল, আয়াত: ১৯]
এ বিশেষ রহমত যা নবীগণ ও তাদের অনুসারীরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন এগুলো ঈমান, ইলম, আমল, সর্বদা উত্তম অবস্থা, দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা ও কল্যাণ ইত্যাদির তাওফিক প্রার্থনা করা। আর আল্লাহর বিশেষ বান্দাহদের এগুলো অর্জনই মূল লক্ষ্য-উদ্দেশ্য।[1]
[1] আল-হাক্কুল ওয়াদিহ আল-মুবীন, পৃ. ৮২-৮৩; আত-তাফসীর, ৫/৬২১।
কোন মন্তব্য নেই